ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

এবার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে কটূক্তি করলেন গয়েশ্বর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
এবার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে কটূক্তি করলেন গয়েশ্বর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলে এবার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে কটূক্তি করলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

তার মতে, একাত্তরে ১৪ ডিসেম্বর নির্বুদ্ধিতার কারণেই এদেশের সূর্য সন্তান বুদ্ধিজীবীরা মারা গেছেন!
 
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে গয়েশ্বর এমন মন্তব্য করেন।


 
শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাল ও বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীকে নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে রাবির সাবেক ছাত্রদল নেতাদের সংগঠন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ন্যাশনাল এক্স স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (রুনেসা)।
 
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আরেকটা জিনিস হলো যে, এই যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা। ঠিক আছে, করছেন ভাল। কিন্তু যারা পাকিস্তানের বেতন-ভাতা খাইসে শেষ দিন পর্যন্ত, তারা নির্বোধের মতো মারা গেলো। আর আমাদের মতো নির্বোধরা তাদের শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে ফুল দেই প্রতি বছর। না গেলেও আবার পাপ হয়।

তিনি আরও বলেন, উনারা যদি এতো বুদ্ধিমানই হয়ে থাকবেন তাহলে, ১৪ তারিখ (১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১) পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে থাকেন কি জন্যে নিজের ঘরে? একটু বলেনতো আমারে? আর তাদের যারা স্ব স্ব কর্মস্থলে প্রতিমাসে বেতন তুললো, পাকিস্তানের বেতন খাইলো, এইটা নিয়াওতো কথা বলা যায়, যায় কিনা?
 
উপস্থিত নেতাকর্মীরা তখন সমস্বরে বলেন, বলা যায়। গয়েশ্বর বলতে থাকেন, হ্যাঁ নেতৃত্বের অজ্ঞতার কারণে, আগাম সতর্কতার অভাবে ২৫ মার্চ যারা মারা গেছে, আত্মাহুতি দিসে, তারা না জানার কারণে। কিন্তু চৌদ্দই ডিসেম্বর যারা মারা গেছে তারাতো অজ্ঞাত কারণে মারা যায় নাই। তারা জ্ঞাতসারেই বাড়িতে ছিল। তারা প্রতিদিনই তো যে যেখানে কর্মস্থল ছিল সেখানে যাইতো।
 
এসময় গয়েশ্বর রায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা রফিকুল্লাহ চৌধুরীসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
 
তিনি বলেন, যিনি স্পিকার আছেন তার বাবা নাম কি? রফিকুল না? রফিকুল কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছিলো নাকি? পাকিস্তানের চাকরি করে নাই? আরো শফিউল আজম চাকরি করে নাই? মখা আলমগীর করেন নাই? আশিকুর রহমান করেন নাই?
 
পাকিস্তানের বেতন খাইলো, ভাতা খাইলো তারা হয়ে গেলো মুক্তিযোদ্ধা, আর যারা পালায়া বেড়াইলো, না খায়া বেড়াইলো তারা হইয়া গেলো রাজাকার। তাই না? এই যে বিষযগুলি এগুলো কিন্তু পরিষ্কার করা দরকার। কারণ এই বিষয়গুলি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড হলে চলে না।
 
এ বক্তব্যের আগে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় খালেদা জিয়ার বিতর্কিত মন্তব্যের সমর্থনে কথা বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন বিতর্ক আছে। উনি কমও বলেননাই, বেশিও বলেননাই। এই বিতর্কটা উঠছিল একানব্বইয়ের পার্লামেন্টে। প্রয়াত কর্নেল আকবর হোসেন প্রশ্নটা উত্থাপন করেছিলেন।

আমি সাংবাদিক ভাইদের বলবো আপনারা লাইনটা দিয়া মতামত জরিপ করেন। আপনারা ম্যাসেজ দিয়া মতামত জরিপ করেন কথাটার পক্ষে-বিপক্ষে।
 
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বা পত্রিকার পাতায় এরকম একটা লাইন দিয়া মতামত জরিপ দেন যে, লিখে দেন যাদের গ্রামে যতজন মারা গেছে জানাতে। একাত্তর সালে শুধু পাকিস্তানিদের গুলিতে না স্বাভাবিক মৃত্যুওতো আছে। দেখেন তারপরে কতজন মারা গেছে সে পরিসংখ্যানটা চলে আসবে। এটা নিয়ে বিতর্ক করার তো দরকার নাই।
 
আমার কথা হলো এটা তো বাণী না যে, এটা পরিবর্তন করা যাবে না। শেখ সাহেব যেটা বলছে হিব্রু এয়ারপোর্টে সেটা তোর তার বাণী না। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের যুদ্ধ মুক্তির যুদ্ধ এ কথা বলে যে বাজার মাত করেন এটা তো বাজার মাতের বিষয় না। অজ্ঞতাবশত তিন মিলিয়ন ৩০ লাখ হয়ে গেছে।
 
তাড়াহুড়ার মধ্যে কানে কানে বলছে আর উনি তাড়াহুড়ার মধ্যে একটা কথা বলছে। আমরা এটাকে একটা টার্ম হিসেবে নিয়েছি। আমরা কোনোদিন এইটা গুইনা দেখলাম না। কিন্তু এখনতো আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি আছে, সংগঠন আছে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে। আমরা ইচ্ছা করলে সাত দিনের মধ্যে পরিসংখ্যানটা বের করতে পারি।
 
গয়েশ্বর নিজেও শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা আহাম্মক কিনা আমি জানি না। তাদেরকে বলবো প্রধানমন্ত্রীকে বলেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এইডা একটা জরিপ কইরা ফেলেন। একটা প্রকৃত ইতিহাস চইলা আসুক। মতান্তরে যতটুকু জানি ২ লাখ ৭৬ হাজার শহীদ পরিবারের তালিকা আছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে, তাহলে বাকি ২৭ লাখ গেলো কই?
 
সুতরাং গলার জোড়ে কথা না বলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জরিপ করেন। সংখ্যা ৩০ লাখের জায়গায় যদি ৬০ লাখ হয় হইলো। অসুবিধার কি? আর সংখ্যা ৩০ লাখ না হয়ে যদি ৩ লাখই হয় তাতেই বা আমার সমস্যাটা কি? দেশ স্বাধীন তো হইসে।
 
১০টাকার বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হোক আর লাখ টাকার বিনিময়ে হোক দেশতো স্বাধীন হইসে। সুতরাং এইটা তো বিতর্কের বিষয়বস্তু না কোনো মতেই। পরিসংখ্যান করার পরে যদি ভুল হয়ে থাকে যত কথা আছে বলবেন।
 
খালেদা জিয়া সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন জানিয়ে সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে বক্তৃতায় গয়েশ্বর বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তি নানা দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জাতীয়তাবাদী বালি, শুর্কি একসঙ্গে করে ইমারত গড়ে তুলতে একটি নকশা এবং একজন রাজমিস্ত্রি দরকার।
 
আলোচনা সভায় রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া ও সংগঠনের সভাপতি বাহাউদ্দিন বাহার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক ছাত্রনেতারা বক্তব্য দেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
এমএইচপি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।