ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

গাঁয়ের নেতারা ন্যাম-গুলশানে

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৬
গাঁয়ের নেতারা ন্যাম-গুলশানে

ঢাকা: আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন সামনে রেখে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী গাঁয়ের নেতারা মানিক মিয়া এভিনিউ’র ন্যাম ফ্লাট, গুলশান, ধানমন্ডি, বনানী ও নিকুঞ্জসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ‍অফিস, বাসা ও দলীয় কার্যালয়ে ঢুঁ মারছেন।
 
দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নের ভিত্তিতে অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনে নৌকা-ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নামার আগে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে স্থানীয় সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

 
 
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের উপকূলীয় ১২টি জেলার ৫ শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর মধ্যে এই দৌড়-ঝাঁপ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী প্রথম ধাপে আগামী মার্চে এসব ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ হবে।
 
সূত্রমতে, চলতি ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তায় তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে উপকূলীয় ১২টি জেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরুর খবর প্রচারের পর আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকার সংসদ সদস্যদের ন্যাম ফ্লাটে আসতে শুরু করেন।
 
কারণ, দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নের ভিত্তিতে প্রথমবারের মত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ পাবেন।
 
সম্প্রতি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ’র ন্যাম ভবনে গিয়ে দেখা যায়, উপকূলীয় জেলার বেশিরভাগ সংসদ সদস্য’র ফ্লাটে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড়।
 
আগে বিভিন্ন প্রয়োজনে ঢাকায় এলেও এই প্রথম গাঁয়ের নেতারা জাতীয় নেতাদের কাছে আসছেন নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চাইতে। এদের প্রত্যেকেরই প্রত্যাশা- দল তাদের মনোনয়ন দিয়ে সংসদ সদস্য ও পৌরসভার মেয়রদের মত আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা মার্কায় নির্বাচন করার সুযোগ দেবেন।
 
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ’র ৬ নম্বর ন্যাম ভবনে হাতিয়ার সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউসের ফ্লাটে কথা হয় সেখানকার সুখচর ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী মোহাম্মদ হানিফের সঙ্গে।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের ইউনিয়নে আমি ছাড়া আরো দুইজন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ব্যাপারে আগ্রহী। যেহেতু দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নের ভিত্তিতে এবার নির্বাচন হবে, তাই আমাদের এমপি মহোদয়’র সাথে আগে-ভাগেই যোগাযোগ করছি, যাতে নৌকা প্রতীকটা পাই।
 
পরে এ ব্যাপারে কথা হয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউসের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার সংসদীয় এলাকা থেকে প্রতিদিনই লোকজন ন্যাপ ফ্লাটে আসেন। ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে এই আসা-যাওয়াটা বেড়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই নির্বাচন করতে আগ্রহী। কিন্তু সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। যোগ্যতা, সততা ও দলের প্রতি আনুগত্য বিবেচনা করে এদের মধ্য থেকেই ৭টি ইউনিয়নের জন্য ৭ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বেছে নিতে হবে।
 
এদিকে সংসদের বাইরে থাকায় বিএনপি থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী গাঁয়ের নেতাদের ন্যাম ফ্লাটে যাওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। তারা ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী ও নিকুঞ্জসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বসবাসরত বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অফিস, বাসা ও দলীয় কার্যালয়ে ঢুঁ মারছেন।
 
কেউ কেউ আবার গুলশান ও নয়াপল্টন কার্যালয়েও আসছেন ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে।
 
সম্প্রতি নিকুঞ্জের লেক রোডে বিএনপির প্রচার সম্পাদক সাবেক বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার চেয়ারম্যান আবুল কালাম ইউপি নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে কথা বলছেন।
 
জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রথম ধাপে সোনাইমুড়ি উপজেলার ইউপিগুলোতেও নির্বাচন হবার কথা রয়েছে। যারা  চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী, তারা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছেন। সেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য আমাদের নেতা সাবেক চিফ হুইপের সঙ্গে আলাপ করতে এসেছি। উনারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই আমরা মেনে নেব।
 
পরে জয়নুল আবদিন ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, ইউপি নির্বাচনে ‍অংশ নেওয়ার বিষয়টি আমাদের মহাসচিব (ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। এখন আগ্রহী প্রার্থীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে আমাদের ‍অভজার্ভেশন হাইকমান্ডকে জানাব। হাইকমান্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
 
সূত্রমতে, শুধু সাবেক সংসদ সদস্য নয়, দলের বর্ষীয়ান নেতাদের বাসায়ও ঢুঁ মারছেন বিএনপি থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা। গুলশান, বনানী ও ধানমন্ডিতে বসবাসরত কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় প্রতিদিনই গায়ের নেতারা ভিড় করছেন। যে কোনো মূল্যে তারা দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চান।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীণ রাজনীতিক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনী এলাকার লোকজন সারা বছরই তো আমার বাসায় আসা-যাওয়া করেন। সবার জন্যই দরজা খোলা। তবে এখন যারা আসছেন, তাদের অনেকেই ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে কথা বলছেন। তফসিল ঘোষণার পর যখন প্রার্থী বাছাই শুরু হবে- তখন আগ্রহীদের ভেতর থেকেই প্রার্থী মনোয়ন দেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৬
এজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।