২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে দলটি টানা দ্বিতীয় বারের মতো ক্ষমতায় আসে। তবে এই নির্বাচন নিয়ে ওই সময় দেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটও তৈরি হয়।
শুধু বিএনপিই নয়, বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণফোরাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
তবে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও এরশাদের জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), তরীকত ফেডারেশনের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি শুধু নির্বাচন বর্জন করেই থেমে থাকেনি। ওই নির্বাচন প্রতিহত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। তবে তা চরম সহিংসতার মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট লাগাতার হরতাল, অবরোধ দিয়ে ব্যাপক সহিংসতা চালায়। যানবাহনে আগুন, বোমা মারার ঘটনাসহ নানা সহিংসতায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং বিপুল সম্পদের ক্ষতি হয়।
প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত স্বল্প ভোটার উপস্থিতির এই নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি বর্তমান সরকার শপথ গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। সরকার গঠনের এক বছর পেরিয়ে আবারও চাপের মুখে পড়তে হয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের এক বছরপূর্তিতে আবারও আন্দোলনে নামে বিএনপি। লাগাতার ৯২ দিন অবরোধ চলতে থাকে। এই সময় আবারও যানবাহনে আগুন এবং পেট্রোল বোমায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পর সরকারকে আর বড় ধরনের কোনো চাপে পড়তে হয়নি।
এদিকে গত কয়েক বছরে সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই সরকারের মেয়াদে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো নিজস্ব অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণ। সরকারের এ মেয়াদেই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং গত ১ অক্টোবর সেতুর মূল অবকাঠামো প্রথম স্প্যানটি ওঠানো হয়। এর মধ্য দিয়ে পদ্মাসেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
সরকার স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাণকাজও শুরু করে। গত ৩০ নভেম্বর পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুরু হয়েছে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। এ বছর শুরু হয় মালিবাগ-মৌচাক-রামপুরা ফ্লাইওভারে যানবাহন চলাচল।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি সরকারকে বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখীও হতে হয়েছে। সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলা করা। গত আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বর্তমানে নতুন এবং পুরনো মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, খাদ্য এবং পুনরায় স্বদেশে ফিরিয়ে দেওয়া সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আশ্রয় এবং খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারলেও তাদের ফেরত পাঠানোর চ্যালেঞ্জ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ছিলো একটি বড় আলোচিত ঘটনা। ৭ থেকে ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। এ সময় তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিসহ সেদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শেখ হাসিনার এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে বলে দাবি আওয়ামী লীগের।
সরকারের ৪ বছরপূর্তি উপলক্ষে বিগত সময়ে সফলতাগুলো তুলে ধরে ১২ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ সময়:০১৩০ ঘন্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
এসকে/জেএম