জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর এবং দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। যে কারণে গঠতন্ত্র অনুযায়ী দলটির সদস্যপদ ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া জন্য তারা অযোগ্য হন।
কিন্তু বিএনপির নেতারা মামলার রায়ে এমন বড় সাজা আসার আশঙ্কায় দলীয় প্রধান ও তার ছেলের সুযোগ অক্ষুণ্ন রাখতে তড়িঘড়ি করে গঠনতন্ত্রই সংশোধন করে ফেলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ননা, বিএনপির গঠনতন্ত্রের সাত ধারায় বলা ছিল-১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির ৮ নম্বর আদেশে দণ্ডিত ব্যক্তি, দেউলিয়া, উন্মাদ, সমাজে দুর্নীতিপরায়ন বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি-জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যে কোনো পর্যায়ের যে কোনোনির্বাহী কমিটির সদস্য পদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী পদে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
দুর্নীতি পরায়ন ব্যক্তি হিসেবে খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান দণ্ডিত হলেও যেন তারা দলে থাকতে পারেন, একইসঙ্গে নির্বাচনেও যেন অংশ নিতে পারেন, সেব্যবস্থা করতে ওই ৭ নম্বর ধারা গঠনতন্ত্র থেকে বাদ দিয়ে দেয় বিএনপি।
আর গঠনতন্ত্র সংশোধন হলে বা দলের কমিটিতে পরিবর্তন হলে তা নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে হয়। এক্ষেত্রে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ২৮ জানুয়ারি বিএনপি তার সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়ে যায়। তবে বিএনপি উল্লেখ করেছে- ২০১৬ সালের ১৯ মার্চের কাউন্সিলে সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (৩১ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনকে ওই সংশোধনী গ্রহণ না করার জন্য নির্দেশ দেন হাইকোর্টে।
এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিষয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপর কমিশন বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেবে।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি দুই বছরের বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং সেই দণ্ডভোগের পর পাঁচ বছর সময় পার না হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। এক্ষেত্রে আপিল বিভাগ যদি অনুমতি না দেয়, তবে আপিল করলেও তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে না। এদিক থেকে খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে। এখন দলের সদস্য পদে থাকার অযোগ্য হওয়ার পথেও রয়েছেন তারা।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, কমিশন যদি আদালতের আদেশে বিএনপির গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করেন এবং বিএনপিকে নতুন করে কমিটির তালিকা দিতে বলে, তবে খালেদা আর তারেক আর কমিটিতে থাকছেন না। কারণ আদালতের আদেশ অনুযায়ী, গঠনতন্ত্র সংশোধনী গ্রহণযোগ্য নয়। আর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিএনপির সদস্য পদে থাকতে খালেদা আর তারেক অযোগ্য। কেননা, দুর্নীতিপরায়ন হিসেবে স্বীকৃত।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (০১ নভেম্বর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেছেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা পেয়েছি। এখনো সময় আছে। কমিশন বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৮
ইইউডি/এসএইচ