শুধুই বিপুর নির্বাচনী কার্যালয়ই নয়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আনাচে-কানাচে ঝুলছে নৌকা প্রতীক তথা বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রীর পোস্টার। ৩০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণাও তুঙ্গে।
কার্যালয়ে বসে কথা হয় শুভাঢ্যা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. রনির সঙ্গে। তিনি বলেন, দশ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনা করছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকেল্পর কারণে মানুষের সাড়া পেয়েছি ব্যাপক। এ সময়ে (গত দশ বছরে) প্রতিমন্ত্রী অনেক কাজ করেছেন। মানুষ চেষ্টা করলে পারে তার বাস্তব প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে বিপু ভাইকে দেখে। একটা স্টেডিয়াম হয়েছে এ এলাকায়, এটা কল্পনাতেও ছিলো না। মেগা মেগা প্রজেক্ট এ এলাকার উপর দিয়ে যাচ্ছে। রাস্তা-ঘাট অনেক উন্নত হয়েছে। ইউনিয়নের রাস্তার পাশ দিয়ে ফুটপাত নির্মাণ করেছেন বিপু। এসব কাজে বিপুর সমর্থন বেড়েছে বলে দাবি তার।
রনি বলেন, বিপু তথা নৌকার পক্ষে যে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। ইয়াং জেনারেশন তাদের সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবে না এবারও। উন্নয়নের অংশীদার তারাও হতে চায়। ক্লিন, পরোপকারী মানুষ বিপু। সাধারণ মানুষ কিছু না কিছু পেয়েছে তার কাছে। দূর হয়েছে সন্ত্রাসের আখড়া। কেরানীগঞ্জ এখন সন্ত্রাসমুক্ত।
ঢাকা-৩ আসনটি কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিনজিরা, আগানগর, তেঘরিয়া কোন্ডা ও শুভাঢ্যা এ ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখের কিছু বেশি।
স্থানীয়রা বলছেন, নসরুল হামিদ বিপু ‘হাসতে হাসতে’ পাস করবেন। ক্লিন ইমেজ তার বড় শক্তি। বিএনপি প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে আছে। কারণ তার মানুষের সঙ্গে তেমন সখ্য নেই। তবে তার ছেলের বউ নিপুণ রায় চৌধুরী দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে মাঠ গুছিয়ে রেখেছেন। এটি বড় শক্তি বিএনপির। তবে নিপুণ রায় চৌধুরী এখন কারাগারে থাকায় নেতা-কর্মীরা প্রায় বিচ্ছিন্ন। এ অবস্থা বিএনপির প্রার্থীকে জিতে নিয়ে আসা বেশ কষ্টকর হবে।
গত ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনী এলাকা কদমতলীর পাশে বন্দ ডাকপাড়া এলাকায় ৫/৬ জন যুবককে বিএনপির প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পক্ষে লিফলেট নিয়ে দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।
জানতে চাইলে তাদের একজন বলেন, আমরা অনেক কষ্টে প্রচারণা চালাচ্ছি। স্থানীয়ভাবে এ এলাকা ধানের শীষে ঘাঁটি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে অবশ্যই গয়েশ্বর চন্দ্র বাবু জিতবেন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোজাদ্দেদ আলী বাবু বাংলানিউজকে বলেন, ভোটের সময় পর্যন্ত প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলে গয়েশ্বর বাবু জিতবেই। ধানের শীষের পক্ষে যে জন-জোয়ার উঠেছে তা রোখার ক্ষমতা কারো নেই। ভোটের দিন ভোটাররা যেন বাধাহীনভাবে কেন্দ্রে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে বিপরীতে বিপুর জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে নতুন ভোটাররা এবার বিপুর বড় ফ্যান। অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিপুর প্রতি আস্থা রাখছেন তারা। জিনজিরায় একটি দৃষ্টিনন্দন অডিটরিয়াম, শুভাঢ্যা খাল নিয়ে বিপুর প্ল্যান রয়েছে। এগুলো তরুণদের আকর্ষণ করেছে। এ আসনের প্রায় ৪০ শতাংশ তরুণ ভোটার নির্বাচনে বড় প্রভাব রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঢাকা-৩ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ১১ হাজার ৬৪৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬০ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৭ জন। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন নসরুল হামিদ বিপু।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে নসরুল হামিদ বিপু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১ লাখ ২৩ হাজার ৩০২ ভোটে বিপু নির্বাচিত। গয়েশ্বর চন্দ্র পান ৭৮ হাজার ৮১০ ভোট।
২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে নসরুল হামিদ বিএনপির আমান উল্লাহ আমানের কাছে পরাজিত হন। ১৯৯৬ সাল এবং ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের হারিয়ে আমান টানা এমপি নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের শাহ জাহান এবং ১৯৯১ সালে মোস্তফা মহসিন মন্টুকে পরাজিত করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮
এমআইএইচ/ইএস/এসএইচ