দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যমুনা গ্রুপের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুলের স্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন একই আসনে। নিজের ভোট ব্যাংক থেকেই জয়ের প্রত্যাশা করছেন তিনি।
আর বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ছিলেন নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক। সোমবার (১৭) তার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
অন্তত সাত জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এই দু’জনের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা হবে বলে মনে করছেন দোহার-নবাবগঞ্জের ভোটাররা।
২০০১ সালের নির্বাচনে সালমান এফ রহমান ২৩শ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কাছে। সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। ২০০৬ সালেও সালমান এফ রহমান জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছিলেন দোহারে। সেনা সমর্থিত মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের সময় তিনি আটক হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জেল থেকে ছাড়া পান তিনি। কিছুদিন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ততার কারণে ও রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সালমান এফ রহমান নিয়োগ পান শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে।
ঢাকা-১ আসনে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যমুনা গ্রুপের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুলের স্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের সাবেক গৃহায়ন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সালমা ইসলাম নির্বাচিত হন।
নবাবগঞ্জ বাজারের বড় গোল্লা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা জেরম গমেজ বলেন, নৌকার সমর্থন বেশি। নৌকারই বিজয় হবে।
মুক্তিযোদ্ধা জোসেফ বিজয় বলেন, জোর নৌকার। সালমা ঢিলা দিয়েছেন। তবে এমপি থাকাকালে অনেক কাজ করেছেন।
কাশিমপুর বড় রাজপাড়া এলাকার আজহার উদ্দিন বলেন, সবাই পরিবর্তন চায়। নতুন লোক চায়। এই এলাকায় নৌকার জোর বেশি।
দোহার উপজেলার কাটাখালী এলাকার অটোচালক মোস্তফা বলেন, কেবল পোস্টার লাগানো হয়েছে। প্রচার বাড়ছে। মানুষ যাকে মনে করবে ভালো তাকেই ভোট দেবে।
জয়পাড়া বাজারে সালমান এফ রহমানের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়। বিজয় দিবসে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সরব ছিল কার্যালয়।
সালমান এফ রহমানের নির্বাচনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুর রউফ বলেন, মহাজোট প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা এবয় প্রচারে আমরা অনেক এগিয়ে আছি। মহাজোটের সমস্ত লোক আমাদের সঙ্গে আছে। মান্নানও আমাদের সঙ্গে আছেন। সালমান এফ রহমান গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে অনেক এগিয়ে বলে তার দাবি।
তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা টিম গঠন করা হয়েছে। তারা ১৭৮টি কেন্দ্রে কাজ করছে। সব মিলে ৪০ হাজার কর্মী মাঠে কাজ করছেন। এতে ভালো প্রভাব পাওয়া যাচ্ছে। দোহারের শাহিনপুকুর এলাকায় সালমানের বাড়ি। সে হিসাবেও এগিয়েছেন। বিরোধীপক্ষকে খুব শক্তিশালী মনে না করলেও দুর্বল ভাবছেন না তারা।
নির্বাচনী কার্যালয়ের কাছেই কয়েকজন তরুণ জানালেন, এবার সালমান এফ রহমানের সময়।
সালমান এফ রহমান প্রায় প্রতিদিনই তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত জনসংযোগ করছেন। জনসংযোগকালে তিনি বলেন, দোহার-নবাবগঞ্জের মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করা আমার পারিবারিক ঐতিহ্য এবং শিকড়ের প্রতি দায়বদ্ধতা। এই এলাকার সড়ক ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ও সংস্কার আমাকে করতেই হবে। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপনাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যটকবান্ধব পরিবেশ তৈরি, ইছামতির পানির প্রবাহ ও নাব্যতা বাস্তবায়ন আমার অঙ্গীকার। দোহার-নবাবগঞ্জের নারীদের উন্নয়নে আমি কাজ করে যাবো। এছাড়া পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর ভূমিকা অনেক বেশি। কাজ করে যাবো তাদের জন্য।
দুই উপজেলা মিলে গঠিত এই আসনে মোট চার লাখ ৪০ হাজার ৪০৭ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১৬ হাজার ৮০৫ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ২৩ হাজার ৬০২ জন।
বিশেষ করে নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চাইছেন সালমা ইসলাম। তিনি বলছেন, আমি বিগত পাঁচ বছর আপনাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। আবার নির্বাচিত করলে আপনাদের বাকি কাজগুলো করে যাবো।
দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কামাল হোসেন, সিপিবির আবিদ হোসেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের জালাল উদ্দিন, জাকের পার্টির সামসুদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্রি সেকেন্দার হোসেন এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮
এমআইএইচ/ইএস/এএ