বিএনপি-জামায়াতের চার দলীয় জোট সরকারের সময় আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাম-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সম্বয়ে ১৪ দল গঠিত হয়। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত সরকারে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, সাম্যবাদী দল, জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে মন্ত্রী নির্বাচন করা হয়।
তবে গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ১৪ দলের শরিকদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ এককভাবে সরকার গঠন করে। এরপর থেকেই ১৪ দলের শরিকদের অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা শুরু হয়। তবে সরকার গঠনের আগেই জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে যাওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দল আছে, থাকবে। তবে শরিকরা বিরোধী দলে থাকলে তাদের জন্যও ভালো, আমাদের জন্যও ভালো। সংসদে তারা যদি বিরোধী দলের আসনে বসে দায়িত্বশীল বিরোধিতা করেন— সেটা সরকারের জন্যও ভালো, তাদের জন্যও ভালো।
আওয়ামী লীগের এই বক্তব্যকে স্ববিরোধী অবস্থান বলে মনে করছেন ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতারা। তাদের মতে, ১৪ দলের অবস্থান কী হবে বা জোটের শরিকরা কী ভূমিকায় যাবে সেটা আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যমতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হতে পারে। শুধু আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে না।
এ বিষয়ে ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাসদের সভাপতি এবং সদ্য সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বাংলানিউজকে বলেন, কোন দল কোন ভূমিকায় যাবে, সরকারের পক্ষ নেবে না বিরোধিতা করবে সেটা আওয়ামী লীগকে বলার বা সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নেই। কোন দল কী ভূমিকা পালন করবে সেটা স্ব স্ব দল ঠিক করবে। এগুলো বললে বিভ্রান্তি হয়। আমরা এসব বক্তব্য আশা করিনি। এখন পর্যন্ত এসব বিষয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো আলোচনা বা কথা হয়নি। আমরা অবিলম্বে বিষয়গুলো নিয়ে ১৪ দলে বসবো, জোটের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত হবে।
১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতারা জানান, নির্বাচনের পর এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো আলোচনা হয়নি। যে কথাগুলো বলা হচ্ছে, আলোচনা না করেই বলা হচ্ছে।
ওই নেতারা বলেন, ১৪ দল গঠনের যে প্রেক্ষপট ছিলো সেটা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ গড়া। সেই সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। হয় তো আওয়ামী লীগের কেউ কেউ মনে করছেন এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই শেষ হয়ে গেছে। আর সে কারণেই তারা এখন এসব কথা বলছেন।
১৪ দলের ওই নেতারা আরও বলেন, ১৪ দল যখন গঠন হয় তখন একটা সমঝোতা ছিলো একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার গঠন। এই সমঝোতার ভিত্তিতে দীর্ঘদিন ১৪ দল একসঙ্গে রাজনীতি করে আসছে। এটা আওয়ামী লীগেরই মতামত ছিলো। সেটাকে সমর্থন দিয়ে তার ভিত্তিতেই ১৪ দলের পথ চলা। আওয়ামী লীগের এ বক্তব্যে ১৪ দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ ১৪ দল রাখবে না কি তাদের মতো করে সাজাবে সেটা এখন স্পষ্ট নয় বলে জোট শরিকরা মনে করছেন।
তবে ১৪ দল থাকা না থাকা সেটা আওয়ামী লীগের ওপরই নির্ভর করবে। ১৪ দল ভাঙার দায়িত্ব জোট শরিকরা নেবে না বলেও ওই নেতারা মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং সদ্য সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, শরিকদের বিরোধী দলের ভূমিকার কথাও বলা হয়েছে আবার ১৪ দল আছে, থাকবে সেটাও বলা হয়েছে। এই দুইটি বিষয় এক হলো না। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা মনে করি ১৪ দলের প্রাসঙ্গিকতা এখনও আছে। আমরা সংসদে আমাদের যে ভূমিকা সেটা পালন করে যাবো।
১৪ দলের আরেক শরিক বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আসলে সরকারি দল যদি ঠিক করে দেয় কে বিরোধী দল হবে তাহলে সেটা তো আর বিরোধী দল হলো না। যেহেতু আমরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে রাজনীতি করছি এখনকার প্রেক্ষাপটে যদি অন্য কোনো মূল্যায়ন হয় সেটাও আলোচনা করে বলা উচিত। তা না হলে যার যার মতো পথ বেছে নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৯
এসকে/এমজেএফ