দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ড.কামাল হোসেন সিঙ্গাপুরে থাকাকালীন মিডিয়ায় শপথ নেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেন। এ খবর টেলিফোনে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী জানান ড. কামাল হোসেনকে।
জানা গেছে, সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান হাজির হন ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে। সেখানে দেনদরবারে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে তারা উচ্চবাচ্য করার চেষ্টা করেন। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের অন্যতম নেতা আ ও ম শফিক উল্লাহ। এ বিষয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে ছিলাম। ওই সময় সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান এসেছিলেন। তবে তাদের ড. কামাল হোসেন কী বলেছেন তা বলতে পারাবো না।
শফিক উল্লাহ আরও বলেন, দুই নেতার সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার বিষয়ে দলের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে মত আছে। একটি অংশ চায় তারা শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দিলে ভালো হয়। অপর অংশটি চায় তারা যাতে না যায়। সবকিছু দলীয় ফোরাম ও ঐক্যফ্রন্টেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খান ড. কামাল হোসেনের কাছে শপথ নেওয়ার অনুমতি চেয়ে একাধিকবার তার বাসা ও চেম্বারে ধর্না দিয়েছেন। শপথ নেওয়ার পক্ষে নানা যুক্তির মধ্যে মোকাব্বির খান দলীয় প্রধান ড. কামাল হোসেনকে বলেন, আমি অনেক চাপের মধ্যে আছি। আমাকে শপথ নিতেই হবে। যদি শপথ না নেই তাহলে আমার ‘আত্মহত্যা’ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। তখন কামাল হোসেন তাকে বলেন, ‘তুমি কেমন রাজনীতি করো। এটাতো কোনো রাজনীতিবিদের বক্তব্য হতে পারে না। দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্তের বাইরে আমি কিছু করতে পারবো না’।
এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আরামবাগে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই দুই সংসদ সদস্যের আচরণ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের আচরণের খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মিডিয়ায় কেউ মুখ খুলতে রাজি নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণফোরামের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে আমি উপস্থিত ছিলাম। শুনেছি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান শপথ নেওয়ার অনুমতির জন্য কামাল হোসেনকে চাপ দিচ্ছেন। তারা কয়েকদিন ধরে তার পেছনে লেগে আছেন। সোমবার মতিঝিলের চেম্বারে এ নিয়ে দুই নেতার আচরণে ড. কামাল হোসেন ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি দু’জনকেই বলেছেন, শপথ নেওয়া যাবে না। এতে ওই দুই নেতা অসন্তুষ্ট হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করেন। তাদের চেম্বার থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা এ নিয়ে কার্যালয়ে আলোচনা করেন। তাদের দলীয় কার্যালয়ে অবাঞ্চিত ও দল থেকে বহিষ্কারের আওয়াজ উঠেছে।
জানতে চাইলে গণফোরামের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বাংলানিউজকে বলেন, ওইদিন বিকেলে আমি দলীয় কার্যালয়ে ছিলাম। নেতাকর্মীরা অনেক বিষয় নিয়েই কথা বলেছেন, তবে ওই দুই নেতার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারবো না।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলার জন্য সরাসরি সাক্ষাতের সময় চাইলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ। আগামী এক মাসের মধ্যে আমি কথা বলতে পারবো না।
মোকাব্বির খান ‘আত্মাহত্যার’ বিষয়টিকে ডাহা মিথ্যা কথা দাবি করে বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। তবে আমরা সংসদে যাওয়া ও শপথ নেওয়ার ব্যাপারে এখনও ইতিবাচক সিদ্ধান্তেই আছি। কামাল হোসেন এ বিষয়ে কি বলেছেন? জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, তিনিও আগে থেকেই ইতিবাচক আছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয়ী হন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। অন্যদিকে সিলেট-২ আসন থেকে জয়ী হন মোকাব্বির খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৯
এমএইচ/এসএইচ