তবে মামলা পর থেকে সিমপা পাওয়ার প্লান্ট নামের একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাজ হুমকির মুখে পড়েছে। আসামিদের হুমকিতে প্রতিষ্ঠানটির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীই প্রতিষ্ঠান থেকে বের হতে পারছেন না।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) কোম্পানির ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন অভিযোগ এনে সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের অনুসারীরা মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় ওঁৎ পেতে থাকেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম। তিনি দীর্ঘদিন থেকে ইউপি ট্যাক্সের নাম করে মাঝিপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত প্যারাগন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এ্যকুয়া ব্রিডার্সের কাছ থেকে অতিরিক্ত চাঁদা নিয়ে আসছেন। সম্প্রতি প্যারাগন গ্রুপ এখানে সিমপা পাওয়ার প্লান্ট নামে আরেকটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। বর্তমানে সিমপা পাওয়ার প্লান্ট ১০ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে তেঁতুলিয়া উপজেলায় সরবরাহ করছে। যুবলীগের ওই নেতা এ মাসের ১৪ তারিখ রাতে এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সিকিউরিটি গার্ডদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। না হলে কেম্পানি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে ওই রাতেই ডাহুক ব্রীজের সামনে প্যারাগন গ্রুপের মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মুরগি বহনকারী একটি ট্রাকের গতিরোধ করে যুবলীগ ওই নেতা ও তার ১০/১২ জন অনুসারী।
পরে চাকু দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে সিকিউরিটি গার্ড এবং ড্রাইভারকে ট্রাক থেকে নিচে নামিয়ে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অসম্মতি জানালে তাদেরকে এলোপাথারি মারতে থাকে। পরে সবার মোবাইলগুলো নিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে ড্রাইভারের প্যান্টের পকেট থেকে ৪২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে এ ঘটনা কাউকে বললে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর এই অভিযোগে সিমপা পাওয়ার প্লান্টের সিকিউরিটি অফিসার শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয় এই নেতার হুমকিতে কোম্পানির কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। বিদেশি প্রকৌশলীরা কোম্পানিতে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
দুই আসামিকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে তেঁতুলিয়া থানা পুলিশ। তারা হলেন-মাঝিপাড়া এলাকার আলী হোসেন ও প্রামানীক পাড়া গ্রামের শাহ আলম। এদিকে আসামিরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানা হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিদেশিরা কাজে আসতে চান না। এরকম চলতে থাকলে পাওয়ার প্লান্টের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এর আগে ২০১৬ সালেও এই নেতার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে এ্যকুয়া বিল্ডার্স। এদিকে চলতি বছরের ২৯ আগস্ট সিমপা পাওয়ার প্লান্টের পরিচালক জার্মানির নাগরিক স্টিফেন ডাটহেলের সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ওই নেতা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করছেন বলে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি করে এখানে প্যারাগন গ্রুপ সিমপা পাওয়ার প্লান্ট গড়ে তোলে। এই প্রতিষ্ঠানে স্পেন, জার্মান এবং ভারতের প্রকৌশলীরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজ করছেন। কিন্তু মাঝিপাড়া এলাকার আশরাফুল ইসলাম তাদের কাজে সমস্যা সৃষ্টি করছেন। তিনি মাঝে মধ্যেই চাঁদার দাবিতে বিদেশি প্রকৌশলীদের হুমকি দিচ্ছেন। প্রকৌশলীরা এখানে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মামলার প্রধান আসামি যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম। মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের কারণে তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
তিনি জানান, প্যরাগন গ্রুপের সঙ্গে ২০১৮ সালে পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের জন্য মালামাল সরবরাহের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী তিনি ৪১ লাখ টাকার ইট, পাথর, বালি সরবরাহ করেছেন। প্রতি সপ্তাহে বিল দেওয়ার কথা থাকলেও কোম্পানির কাছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ৯ মাস ধরে বকেয়া আছে। ওই টাকা চাইতে গেলে তারা চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছেন।
এ দিকে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, আশরাফুল ইসলাম উপজেলার বিবিন্ন স্থানসহ এ্যকুয়া ব্রিডার্সের সামনে একটি জায়গা দখল করে ক্যান্টিন স্থাপন করে মাদক ব্যবসার পাশাপাশি চাঁদা তুলতেন।
এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এ ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
এইচএডি