আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুনীতির ব্যাপারে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে জিরো টলারেন্স নীতির ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা বাস্তবায়নে তিনি দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়া অপকর্মের সঙ্গে জড়িতরা যাতে দলটিতে স্থান না পান, সে ব্যাপারেও তিনি কঠোর অবস্থানে।
আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনকে সামনে রেখে দলের মেয়াদোত্তীর্ণ সব সাংগঠনিক জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ড সম্মেলন আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশ পাঠানো হয়।
ইতোমধ্যে এই নির্দেশ অনুযায়ী তৃণমূল পর্যায়ের সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই সম্মেলন প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধানে রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আটটি সাংগঠনিক টিম।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কমিটিতে বিভিন্ন পদে থাকা দলের কোন নেতার অবস্থান কী, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। সম্প্রতি দুনীতি, অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করা হয়েছে, তা থেকে আওয়ামী লীগের ভেতরে-বাইরের কেউ ছাড় পাবে না।
বুধবার (০২ অক্টোবর) এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতিবাজ দল, মত, আত্মীয় বা পরিবারের হলেও কেউই ছাড় পাবেন না। প্রধানমন্ত্রীর এ হুঁশিয়ারির প্রভাব দলের সম্মেলনেও পড়বে। সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নতুন কমিটিতে ক্লিন ইমেজের নেতারাই ঠাঁই পাবেন। বাদ পরবেন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ও বিতর্কিতরা। তৃণমূল পর্যায়ের বর্তমান কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ সভাপতি, সম্পাদকমণ্ডলী বা সদস্য- যাদের বিরুদ্ধে অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের প্রমাণ আছে, তারা নতুন কমিটিতে আর স্থান পাবেন না।
সূত্রগুলো আরও জানায়, জাতীয় সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ (কেন্দ্রীয় কমিটি) থেকেও অনেকে বাদ পড়বেন। সভাপতিমণ্ডলী থেকে শুরু করে সম্পাদকমণ্ডলী, কার্যনির্বাহী সদস্য- প্রতিটি পর্যায়েই বাতিলের তালিকায় রয়েছেন অনেকে। এর মধ্যে মন্ত্রিসভার সদস্য এমন নেতারাও আছেন। বিগত কয়েকটি সম্মেলনের মধ্যে এবারের সম্মেলনে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতৃত্বের পরির্তনটা অনেক বড় এবং নজিরবিহীন হতে পারে বলেও এসব সূত্র জানায়।
আর সর্বস্তরের এই পরিবর্তনের জায়গাগুলোতে ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা নেতা, বিশেষ করে যারা সংগঠনটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বা শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে ছিলেন এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখছেন, তাদের একটি অংশ স্থান পাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় সম্মেলনের আগে সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সম্মেলনে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বে পরির্তন আসবে। যারা তরুণ, যারা ক্লিন ইমেজের, তারাই বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে স্থান পাবেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, জেলা, উপজেলা বা তৃণমূল পর্যায়ের সম্মেলন প্রক্রিয়া চলমান। সব পর্যায়েই সম্মেলনের কার্যক্রম চলছে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের কল্যাণে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফল ঘটানোই আওয়ামী লীগের রাজনীতি। যারা দলের আদর্শকে সমুন্নত রেখে রাজনীতি করে তারাই এগিয়ে যাবেন। তারাই নেতৃত্বের জায়গায় আসবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৯
এসকে/টিএ