বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
জয়নুল আবেদীন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জয়নুল আবেদীন বলেন, ইতোমধ্যে সাতজন সংসদ সদস্য জেলখানায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা এসে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়া আগের চেয়ে অনেক অসুস্থ। আমরা লক্ষ্য করছি খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্যারোল সংক্রান্ত বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণমানুষের নেত্রী, আপসহীন নেত্রী।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের কথা উল্লেখ করে জয়নুল আবেদীন বলেন, সাবেক ১/১১’র সরকারও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্য প্যারোলের নাম করে বিদেশ পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। যা জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। খালেদা জিয়া তখনই জানিয়েছিলেন তার বিদেশে কোনো বাড়ি ঘর নেই। বিদেশে কোনো ঠিকানা নেই। তিনি এ দেশের মানুষ। এ দেশেই থাকতে চান।
‘খালেদা জিয়াকে আটকিয়ে বর্তমান সরকারও রাজনীতির মাঠ থেকে এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছে। ইতোমধ্যে তিনি সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে পরিষ্কার করেছেন, যে মামলায় তাকে আটকিয়ে রাখা হয়েছে সেই মামলায় তিনি নির্দোষ। এই মুহূর্তেই তিনি জামিন পাওয়ার হকদার। আমরা আইনজীবীরা তাই মনে করি। ’
খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে সরকারের তরফ থেকে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার একদিকে বলছে, আদালত জামিন দিলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। এটা কয়েকদিন পর্যন্ত বলে যাচ্ছে। আগেও বলেছে। অথচ আমরা যখন আদালতে জামিন আবেদন শুনানি করি তখন সরকারের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। যদিও এ ধরনের মামলায় আমরা কখনও সরকারপক্ষ থেকে এভাবে জোরালো আপত্তি করতে দেখিনি। কিন্তু খালেদা জিয়ার মামলায় জোরালো আপত্তি করার ফলে বারবার আমরা জামিন আবেদন শুনানি করার পরও তিনি জামিন পাচ্ছেন না।
সরকারের এ ধরনের বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে উল্লেখ করে জয়নুল আবেদীন বলেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে যে, সরকার তো কোনো আপত্তি করে না। অথচ জনগণ জানে না সরকারপক্ষ থেকে দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা কীভাবে আদালতে জোরালোভাবে আপত্তি উত্থাপন করে। বাস্তবিক সরকারের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয় তা একবারে অসত্য।
জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, অতি সম্প্রতি আমরা কয়েকবার জামিন আবেদন নিয়ে আদালতে গিয়েছিলাম। প্রতিবারেই সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো আপত্তি করা হয়েছে। আমরা জামিনের জন্য পুনরায় আদালতে যাবো। আমরা আশাকরি সরকার যে কথা বলছেন যে, আদালত জামিন দিলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তাদের এ কথাটি সরকারি আইন কর্মকর্তার মাধ্যমে আদালতে জোরালোভাবে জানাবেন এটাই আমরা আশা করি।
‘খালেদা জিয়ার মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত। তিনি আইনগতভাবে জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন। আশাকরি সরকার ভবিষ্যতে এ আইনগত অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে এবং কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। যদি সরকার হস্তক্ষেপ না করে তিনি এ আদালত থেকে জামিন পাবেন’- মন্তব্য করেন খালেদা জিয়ার এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক এ সভাপতি বলেন, ৩৭ মামলা রয়েছে। এর মধ্যে অরফানেজ ট্রাস্টেরটা আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আর চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলা হাইকোর্ট বিভাগে, যেটাতে সাত বছরের সাজা রয়েছে। প্রথমে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পরে আপিল বিভাগে আবেদন করবো। সরকার হস্তক্ষেপ না করলে আশাকরি এই দুই মামলায় জামিন পেলে তার মুক্তিতে কোনো বাধা নেই।
আরেক প্রশ্নের জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, যখনই জামিন আবেদন নিয়ে সোচ্চার হই তখনই একটা খবর এসে যায় খালেদা জিয়া প্যারোলে চলে যাচ্ছেন। এই যে প্যারোল প্যারোল রাজনীতি, যে গুঞ্জন এতে খালেদা জিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
প্যারোল ও জামিনে মুক্তির তফাৎ কী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকারের কাছে অনুকম্পা চাওয়া, এজন্য সরকার বারবার বলে আমাদের কাছে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চান। খালেদা জিয়া নির্দোষ, তিনি কেন দোষ স্বীকার করবেন।
প্যারোলের বিষয়ে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, গতকাল আমাদের একজন সংসদ সদস্য বিষয়টি পরিষ্কার করেছে। তিনি বলেছেন- ম্যাডামকে প্যারোলের কথা জিজ্ঞাসা করেছে, ম্যাডাম বলেছেন আমি প্যারোলের কোনো আবেদন করবো না এবং করিনি। আমি জামিন পাওয়ার হকদার। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৯
ইএস/এএ