বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দিনভর রাজধানীর পাঁচটি স্থানে জানাজা ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সন্ধ্যায় জুরাইন কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় এই মুক্তিযোদ্ধাকে। দিনব্যাপী এসব জানাজায় লক্ষাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
গত সোমবার (৪ নভেম্বর) নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাদেক হোসেন খোকা। সেদিন রাতে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে তার প্রথম দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দিনগত রাত ১১টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে খোকার মরদেহ নিয়ে দেশের পথে রওয়ানা দেন পরিবারের সদস্যরা, সঙ্গে ছিলেন দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ডেপুটি মেয়র আব্দুস সালাম। দুবাই হয়ে একদিন পর বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকাল ৮টা ২৬ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে মরদেহ বহনকারী প্লেনটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ গ্রহণ করেন। সেখানে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে অ্যাম্বুলেন্সে খোকার মরদেহ প্রথমেই নেওয়া হয় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। সকাল ১০টা থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতাসহ কয়েক হাজার মানুষ সেখানে অপেক্ষা করছিলেন। সকাল পৌনে ১১টায় খোকার মরদেহ সেখানে পৌঁছায়।
দলের পক্ষ থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইসরাক হোসেন জানাজার আগে সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। বেলা সোয়া ১১টায় দেশের মাটিতে প্রথম জানাজা হয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে। সেখান থেকে সরাসরি মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় শহীদ মিনারে। সর্বস্তরের জনগণ সেখানে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এই নেতাকে। সেখান থেকে দুপুর দেড়টায় মরদেহ পৌঁছে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখানে অসংখ্য নেতাকর্মী আর জনতার ভালবাসায় সিক্ত হন সাদেক হোসেন খোকা।
দুপুর ২টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জানাজা। পরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পুরনো কর্মস্থল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রাঙ্গণে। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় জানাজা। এতে অংশ নেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র সাঈদ খোকনসহ কয়েক হাজার মানুষ।
এরপর জন্মস্থান পুরনো ঢাকার গোপীবাগের সেকেন্ড লেনে নেওয়া হয় খোকার মরদেহ। হাজার হাজার জনতা এর আগেই ভিড় জমান তাকে একনজর দেখার জন্য। সেখানে ব্রার্দার্স ইউনিয়ন মাঠে চতুর্থ দফা জানাজা শেষে মরদেহ নেওয়া হয় খোকার নির্বাচনী এলাকা ধূপখোলা মাঠে।
এরপর খোকার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জুরাইন কবরস্থানে। সেখানে গার্ড অব অনার শেষে (রাষ্ট্রীয় সম্মান) সন্ধ্যা ৭টায় চিরনিদ্রায় শায়িত হন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। এই কবরস্থানেই তার মা ও বাবার কবর রয়েছে।
দাফনের আগে গার্ড অব অনার
খোকার মরদেহ কবরে নামানোর আগে ক্র্যাক প্ল্যাটুনের এই গেরিলা কমান্ডারকে পুলিশের ১৭ সদস্যের একটি চৌকস দল ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আবদুল আউয়ালের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। তারা এই মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা স্যালুট জানানো হয় সাদেক হোসেন খোকাকে। এসময় পুলিশের এডিসি নাজমুন নাহারসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দাফনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, বড় ছেলে ইসরাক হোসেন, ছোট ছেলে ইসফাক হোসেনসহ দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং মরহুমের স্বজনরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৯
এমএইচ/একে