বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং কারাগারে নির্মম হত্যাযজ্ঞে প্রাণহারানো জাতীয় চার নেতার একজন- তাজউদ্দীদ আহমদের সহধর্মিণী। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ কর্মী, সেখান থেকে নিজের মেধা, যোগ্যতা ও নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় কাণ্ডারী হয়ে হাল ধরেছিলেন দলের।
২০ ডিসেম্বর বঙ্গতাজপত্নীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে পরপারে পাড়ি জমান তিনি। মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বিভ্রান্ত আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন জোহরা তাজউদ্দীন।
দলে ঐক্য ফেরানোর তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এক অনিবার্য পরিণতির মতই যেন কাণ্ডারী হয়ে স্বজনের রক্তেভেজা দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। হাল ধরেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের।
অনেক বড় বড় নেতাই তখন ঘরের দুয়ার খুলে পথে নামেননি। এর বিপরীতে লোকদেখানো দায় সারেননি জোহরা তাজউদ্দীন। নিভৃতচারী ছিলেন আর ছিলেন এক গভীর দায়িত্ববোধে তাড়িত।
বয়সকে বাধা মানেননি, দলকে গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্বদানের যোগ্য করে তুলতে গভীর মমতায় পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে সহযোগিতা করে গেছেন তিনি।
সংকটে জুগিয়ে গেছেন এগিয়ে যাওয়ার সাহস। সেনাছাউনি থেকে বেপথে যাওয়া বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে সেই সাহসই জাতির মর্মমূলে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করেছেন একমাত্র ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘ডিসেম্বর ২০, ২০১৯, আজ আমার মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের ৬ষ্ট মৃত্যুবার্ষিকী I
‘১৯৭৫ এর ১৫ই অগাস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর এবং ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার পর যখন দেশ ও জাতি দিশেহারা ঠিক তখন এই মহিয়সী নারী ঝাঁপিয়ে পড়েন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনর্প্রতিষ্ঠার জন্য আর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচারের দাবিতেI’
সোহেল তাজ লিখেছেন, ‘আমার স্মৃতিতে সেই দিনগুলো এখনো সংরক্ষিত হয়ে আছে- সেই দিনগুলো যখন আমার মা ছুটে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে- টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। অনেক সময় আমাকে সাথে নিয়ে যেতেন বিভিন্ন মিটিং আর অনুষ্ঠানে। ’
‘‘আমার মাকে বলতে শুনতাম ‘আমি আমার স্বামীকে হারিয়েছি, আমার সন্তানেরা এতিম হয়েছে। কিন্তু জাতি হারিয়েছে বঙ্গবন্ধুকে আর জাতীয় চার নেতাকে, আমার ক্ষতির চে জাতির অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। আর তাই আজ আমি আমার রক্তে মাখা আঁচল নিয়ে আপনাদের কাছে বিচার দিয়ে গেলাম,’’ বলেন তিনি।
১৯৩২ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্ম নেওয়া সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের পৈত্রিক বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ উপজেলায়। ১৯৫৯ সালে বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি তিন মেয়ে ও এক ছেলের জননী।
বঙ্গতাজ দম্পতির একমাত্র ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ ২০০১ এবং ২০০৮ সালে গাজীপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
পরে তার ছেড়ে দেওয়া আসনে ২০১২ সালে উপ-নির্বাচনে জোহরা তাজের মেজো মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে ওই আসনের এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সিমি। তার বড় মেয়ে শারমিন রিপি প্রবাসী ও ছোট মেয়ে মাহজাবিন মিমি এখন দেশে বসবাস করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৯
এমএ/