মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে এ ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই ঢাবির হলে ফের এ ধরনের শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলো।
নির্যাতনের শিকার চার শিক্ষার্থী হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানওয়ার হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দীন ও একই বর্ষের আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দীন।
ক্যাম্পাস সূত্র জানা যায়, জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসাইন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা শিবির সন্দেহে মুকিমকে গেস্টরুমে নিয়ে আসেন। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কথাবার্তায় সন্দেহ হয় তাদের।
এ ঘটনায় তারা মুকিমের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় আফসারকেও গেস্টরুমে নিয়ে আসেন। এক পর্যায়ে তাদের দুইজনকে হলের বর্ধিত ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া মুকিম-আফসার ছাড়াও সানওয়ার, মিনহাজের ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ থাকায় তাদেরও ডাকা হয় সেখানে।
ভুক্তোভুগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাদের জহুরুল হক হল সংসদের সহ-সভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত ও হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন আলম চড় থাপ্পড় মারতে থাকেন। এ সময় লাঠি, রড ও কিল-ঘুষি মারেন হল সাবেক সহ-সভাপতি কামাল উদ্দিন রানা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা।
মারধর শেষে হলের আবাসিক শিক্ষক বিল্লাল আহমেদের মাধ্যমে প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশের হাতে ওই শিক্ষার্থীদের তুলে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ আহত অবস্থায় তাদের শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।
এর মধ্যে গুরুতর আহত হওয়ায় মুকিম ও সানওয়ারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে ঘটনার বিষয়ে হল সংসদের সহ-সভাপতি অভিযুক্ত সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত বলেন, তাদের শিবিরের প্রমাণ পেয়ে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তার দাবি, ওই চার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে শিবিরের দুইটি বই উদ্ধার করেছি। যা পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।
তবে শিবিরের কী বই? এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনো বইয়ের নাম বলতে পারেননি ছাত্রলীগ নেতা অনন্ত।
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে ওই চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, পুলিশকে বলে দেওয়া হয়েছে যে, কোনো প্রমাণ না পেলে শিক্ষার্থীদের থানায় না রাখতে।
নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা হলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে যদি কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করে তবে আমরাও বিষয়টি দেখবো। ’
অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন ও আমির হামজা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জয় বলেন, যে চারজন শিক্ষার্থীর কথা বলা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে শিবির করার অভিযোগ রয়েছে। এজন্য পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
‘তবে আমি যতটুকু জানি তাদের মারধর করা হয়নি। যদি কেউ মারধর করে তবে এটা সমর্থনযোগ্য নয়,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২০
এসকেবি/এমএ