ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

রাজনীতি

দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, বৈষম্য পাহাড় সমান: মেনন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০
দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, বৈষম্য পাহাড় সমান: মেনন জনসভায় বক্তব্য রাখছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু বৈষম্য হচ্ছে পাহাড় সমান। আমাদের মাথাপিছু আয় ১৯০৯ ডলার। কিন্তু যারা দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন তাদের দৈনিক মাথাপিছু আয় এক ডলারেরও কম। এ বৈষম্য কেবলমাত্র অঙ্কের হিসাবে নয়।

শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ১৯৭৪ সালে দেশে মাত্র চারজন কোটিপতি ছিলেন। আর বর্তমানে আমাদের কোটিপতির সংখ্যা এক লাখ ২২ হাজার। তাদের বিলাসী জীবনযাপন দেশের যুবকদের হতাশ করে।

তিনি বলেন, যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। তাহলে অনেক পরিচিত মুখও দেখা যাবে। যত টাকা পাকিস্তানিরা নিয়ে গেছে, তার চেয়েও বেশি টাকা কয়েক বছরে পাচার হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, পার্লামেন্টে যখন ঋণখেলাপিদের নাম প্রকাশ করা হয় তখন একই সঙ্গে অবশ্যই টাকা পাচারকারীদের নাম প্রকাশ করতে হবে। তখন আমরা দেখবো অনেক পরিচিত মুখ। তাদের লুকোনোর জন্যই নাম প্রকাশ করা হয় না। প্রতিদিন ব্যাংক লুট হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক যখন দেউলিয়া হয়ে যাবে, তখন এর দায় নাকি নিতে হবে জনগণকে। কেন জনগণ ব্যাংক ডাকাতদের দায় নেবে? ২০১৪ সালে এক বছরে ৭৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। আমি বলি, সেই টাকার পরিমাণ পাঁচ লাখ হাজার কোটি টাকার ওপরে। আমরা তা দিয়ে একটি বাজেট তৈরি করতে পারতাম। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিয়ে মেনন বলেন, যখন কেউ ধরা পড়ে তখন বলেন, দল কোনো দায় নেবে না। তাহলে কে দায় নেবে? বনে থাকলে দাপিয়ে বেড়াবেন। আর বনের মধ্যে যখন অন্যায় করে ধরা পড়ে যাবেন তখন বলবেন, দায় নেবো না। এ দায় নিতে হবে। যে সমস্ত ভোগবাদী নীতি আমার দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সেই নীতি বাদ দিয়ে আমরা স্লোগান তুলেছি ২১ দফার ভিত্তিতে ন্যায্যতা-সমাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার প্রতি আস্থা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে সামাজিক ন্যায়বিচার, সমতা, মানবিক মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। আমরা সেই সংবিধানের পথে হাঁটতে চাই, চলতে চাই। দেশ উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হবে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হবে। তখন যেন আবার স্লোগান দিয়ে বলতে না হয়- কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না।

জনসভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, এলাকায় এলাকায় যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করতে প্রতিটি জেলার আলাদা বাজেট হওয়া প্রয়োজন। শুধুমাত্র বড় বড় বিল্ডিং আর প্রশস্ত রাস্তা দেশের উন্নয়ন নয়। প্রত্যেকটি মানুষের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকারই হচ্ছে উন্নয়ন। সে ব্যাপারে আমাদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংবিধানেই সামাজিক বৈষম্য রোধ করার কথা লেখা আছে। তাহলে কেন জেলা বাজেট করা হবে না?

তিনি বলেন, রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভেতরে এমন উইপোকা ঢুকে পড়েছে যে এখন দেশে রাজনীতি করে বাড়িতে টাকার গুদাম তৈরি করা যায়। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নো টলারেন্স বলা হয়েছিল। শুধু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দেখতে চাই না। নির্দেশ বাস্তবায়ন দেখতে চাই। রাজনৈতিক পরিচয়ে যারা বাড়িতে টাকার গুদাম তৈরি করতে পারে তাদের ব্যাপারে দায় কার? শুধু ব্যক্তির অপরাধ নয়।

জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ও সংসদ সদস্য (এমপি) মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, মাহমুদুল ইসলাম মানিক ও কামরুল আহসান।

রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকুর সভাপতিত্ব জনসভা পরিচালনা করেন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি রোধ, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত, দেশে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও অর্থনৈতিক লুটপাট বন্ধ করা, নারী ও শিশু ধর্ষণ ও সহিংসতা প্রতিরোধ, মাদকাশক্তি নিরোধ এবং সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গি প্রতিরোধসহ সামাজিক ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে দেশের সব বিভাগীয় শহরে জনসভা করছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০
এসএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।