বিকেল সোয়া চারটায় বিএসএমএমইউ থেকে রওয়ানা করে সোয়া ৫টায় পৌঁছেন ফিরোজায়। সেনানিবাসের বাস ভবন থেকে বের হয়ে ২০১৩ সাল থেকে সেখানেই বসবাস করছিলেন তিনি।
খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বাসায় ফিরলেন দু’দিন হলো। তিনি এখন কেমন আছেন বিষয়টি জানতে উদগ্রীব দলীয় নেতাকর্মীরা। সেজন্য বাংলানিউজের পক্ষ থেকে জানার চেষ্টা করা হয় ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ কেমন আছেন খালেদা জিয়া।
জানতে চাইলে তার চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা চলছে। তিনি শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হলেও পারিবারিক পরিবেশে এখন স্বস্তিবোধ করছেন। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা. জোবাইদা রহমান চিকিৎসার কার্যক্রম সমন্বয় করছেন।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সোশ্যাল ডিসট্যান্স অর্থাৎ, একজন থেকে অপরজনকে যে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলার নিয়ম তা যথাযথ মেনেই ম্যাডামের সেবাদানকারীরাও সেবা দিচ্ছেন। ম্যাডাম আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মোবাইলে কথা-বার্তা বলতে পারছেন। চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলছেন। কখনো শুয়ে, কখনো বসে, কখনো বই-পত্র পড়ে সময় কাটাচ্ছেন।
চিকিৎসার বিষয়ে ডা. জাহিদ জানান, বিএসএমএমইউ-এর মেডিক্যাল বোর্ডের দেওয়া ওষুধপত্রের কিছুটা সংশোধন ও পরিবর্তন এনেছেন ম্যাডামের ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম। তার হাত-পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা রয়েছে। রিউমেটিক আর্থারাইটিস-এর কারণে হাত-পায়ের জয়েন্টে সমস্যা রয়েছে। এগুলো ওনাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে।
তিনি বলেন, কারাগারের নির্জনতা ও নির্মমতার কারণে ম্যাডাম মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেটাতো এখন আর নেই। তার ওজন ৯/১০ কেজি কমে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে ডায়াবেটিসের মাত্রাও কমবে বলে আশা করি। আমরা আশাবাদী কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসায় তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা খারাপ। তিনি এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন। আমরা ২৫ মার্চ রাতে বাসায় গিয়েছিলাম। তখন তার শ্বাসকষ্ট ছিল। কারও সঙ্গে কথা বলেননি। এখন তার চিকিৎসক টিমের নির্দেশনা অনুযায়ী বাসায় চিকিৎসা চলবে।
তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা তার চিকিৎসার তদারকি করবেন- গণমাধ্যমে এ ধরনের সংবাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এটা নতুন কিছু নয়। ম্যাডাম কারাগারে যাওয়ার আগেও ডা. জোবাইদা তার চিকিৎসার সমন্বয় করতেন। তিনি যখন লন্ডনে চিকিৎসা করেছেন তখনও চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ সব ডা. জোবাইদা-ই করতেন। এখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গেও তিনি-ই সমন্বয় করে ম্যাডামের চিকিৎসা দেবেন।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব এর সভাপতি ডা. হারুন আল রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) তো আগে থেকেই অসুস্থ। এখন চিকিৎসকরা তাকে ১৪ দিন আলাদা থাকতে বলেছেন। চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যরা সবাই একই কথা বলেছি। করোনা ভাইরাসের যে মহামারি বিশ্বব্যাপী চলছে এই সময় যাতে তার কাছাকাছি কেউ না যায়। উনি যাতে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসেন। সেজন্য ওনাকে এক ধরনের কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনের মতো রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর তার পুত্রবধূ একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি আগেও ম্যাডামের চিকিৎসার বিষয়টি সমন্বয় করেছেন। এখানেও চিকিৎসক আছেন সবাই মিলে তার চিকিৎসা করবেন।
খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে গিয়েছিলেন পুরোনা ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে। সেদিন ছিল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার চূড়ান্ত রায়ের দিন।
ওই মামলা বিশেষ আদালত তাকে ৫ বছরের সাজা দেন। রায় ঘোষণার পর আর নিজ বাসায় ফিরতে পারেননি তিতি। ৭৭৬ দিন কারাগার ও কারা-হেফাজতে হাসপাতালে থাকার পর ২৫ মার্চ ফেরেন নিজ বাসায়। আপাতত থাকবেন সেখানেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২০
এমএইচ/এএ