ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সামাজিক দূরত্ব না মানায় মারধর, ক্ষমা চাইলেন ‘ক্যাডার আমিন’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২০
সামাজিক দূরত্ব না মানায় মারধর, ক্ষমা চাইলেন ‘ক্যাডার আমিন’

টাঙ্গাইল: নাম আমিনুর রহমান আমিন। তিনি টাঙ্গাইল পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। আমিনুর রহমান আমিন নামে জেলার কেউ তাকে না চিনলেও ‘ক্যাডার আমিন’ নামে সবার কাছেই পরিচিত তিনি।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের নির্দেশ মোতাবেক সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সবাই ঘরে অবস্থান করছেন। এরমধ্যে কেউ কেউ জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার চিন্তা করলেই কাউন্সিলর আমিনে লাঠিপেটার ভয়ে বের হতে পারছেন না।

জরুরি প্রয়োজনে ওষুধ বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেও বাইরে বের হওয়ার চিন্তায় মানুষ ভয়ে আঁতকে উঠছেন। এ অবস্থায় টাঙ্গাইল পৌরবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও ভীতি কাজ করছে।

মঙ্গলবার (০৭ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টা। মানুষের আনাগোনা তেমন একটা চোখে না পড়লেও শহরের নিরালার মোড়ে নিউ মার্কেটে ওষুধের দোকানে মানুষের ভিড়। রাস্তায় দু-একটি মোটরসাইকেল চললেও রয়েছে চালকের পরিচয়পত্র। বেশিরভাগই ওষুধের বিক্রয় প্রতিনিধি। এসময় লাঠি হাতে ক্যাডার আমিন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অজুহাত দেখিয়ে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করেন সাধারণ মানুষদের। এরপর সেখান থেকে চলে যান পার্ক বাজার রোডে। সেখানেও কয়েকটি ফুটপাত ব্যবসায়ী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসা কয়েকজনকে পেটান। এরপর নিরালার মোড় দিয়ে সাধারণ মানুষকে পেটাতে পেটাতে তারা চলে যান শহরের শান্তিকুঞ্জ মোড়ে। সেখানেও পেটানো হয় কয়েকজনকে। এরপর চলে যান ছয়আনি বাজারে। সেখানেও বাজার করতে আসা সাধারণ মানুষকে পেটান তিনি। তাদের ওপরও চলে অমানবিকভাবে লাঠিপেটা। এসময় সরকারি এক নারী স্বাস্থ্যকর্মীকেও লাঞ্ছিত করা হয়।  

সাধারণ মানুষদের লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন ক্যাডার আমিন।  ছবি: বাংলানিউজ

ভুক্তভোগী নারী বাংলানিউজকে জানান, অসুস্থ থাকায় এবং শহরে কোনো যানবাহন না চলায় স্বামীর মোটরসাইকেলে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন তিনি। সেখান থেকে ফেরার পথে সদর থানার সামনে তাদের মোটরসাইকেলটি গতিরোধ করেন ক্যাডার আমিন। এসময় তাদের অকথ্যভাষায় গালাগাল করা হয় এবং ওই নারীকে একাই কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন তারা। একই অবস্থা আরেক দম্পতির। করটিয়া থেকে মোটরসাইকেলে দেলদুয়ার যাওয়ার সময় নিরালার মোড়ে তাদের মোটরসাইকেলটি গতিরোধ করা হয়। এসময় তারা ওই নারীর স্বামীকে জানায় মোটরসাইকেলে দুইজন ওঠা নিষেধ, এই বলে ওই নারীকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে পায়ে হেঁটে যেতে বলেন।

এসময় ক্যাডার আমিন সঙ্গে ছিলেন- টাঙ্গাইল পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাইফুজ্জামান সোহেল, টাঙ্গাইল চেম্বর অব কমার্সের সভাপতি খান আহমেদ শুভ, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন মানিক ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রৌফ।

সাধারণ মানুষকে করোনার অজুহাতে মারপিটের ঘটনায় পুরো জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। চলছে সমালোচানার ঝড়। এরপর টনক নড়ে কাউন্সিলর আমিনুর রহমান আমিনের। পরে কাউন্সিলর আমিনুর রহমান আমিন এ ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেন। সেই ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে করোনা ভাইরাস যেভাবে মহামারি আকার ধারণ করেছে। সে লক্ষে টাঙ্গাইলবাসীকে সুরক্ষা করা এবং ঘরে ফেরার জন্য আবেগের বশে জনগণের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছি। এজন্য আমি লজ্জিত, দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।