মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) সিপিবি’র ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স টিম’র অনলাইনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সভায় নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন। রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এ সভায় গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়ায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস, কারখানা খুলে দেওয়া চরম হঠকারিতা। এটা মালিকের মুনাফার স্বার্থে শ্রমিকদের মৃত্যুকূপে ঠেলে দেওয়া ছাড়া কিছুই নয়। করোনা-মহাবিপর্যয়কালে এর আগেও মালিকরা গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। শত শত কিলোমিটার হেঁটে ঢাকায় এসে শ্রমিকরা আবার ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশে যখন ‘সাধারণ ছুটি’, ‘লকডাউন’ চলছে এবং দেশবাসী চরম আতঙ্কে, তখন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়াই একেবারে অপ্রস্তুত অবস্থায় এভাবে গার্মেন্টস খুলে দেয়াটা গোটা জাতির জন্যই আত্মঘাতী।
সভায় সিপিবির নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা-মহাবিপর্যয়কালেও বকেয়া বেতনের জন্য গার্মেন্টস শ্রমিকদের রাজপথে নেমে আসতে হচ্ছে। আবার শ্রমিক ছাঁটাই, গার্মেন্টস লে-অফ চলছে। শ্রমিকদের জীবন নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন বেসরকারি কারখানা-প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের তিন মাস সবেতন ছুটি দিতে হবে। এ বাবদ ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে। এই অর্থ গার্মেন্টসসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের ব্যাংক-অ্যাকাউন্ট অথবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
সভায় বক্তারা আরও বলেন, মাস্ক-পিপিইসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী তৈরিসহ জরুরি প্রয়োজনে যদি কোনো গার্মেন্টস চালু রাখতে হয়, তাহলে তা করতে হবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে, মালিক ও আমলাদের সুবিধামতো নয়। জরুরি প্রয়োজনে চালু রাখা গার্মেন্টসে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে মানতে হবে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সম্মত থাকা ও খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে সকল শ্রমিক ও কর্মচারীকে কারখানার অভ্যন্তরে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। দূরে অবস্থানরত শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য স্যানিটাইজ বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। কারখানায় প্রবেশের সময় পরিপূর্ণভাবে সকল শ্রমিককে স্যানিটাইজ করে নিতে হবে। হ্যান্ড হেল্ড ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে প্রতিটি শ্রমিকের তাপমাত্রা মেপে কারখানায় ঢোকাতে হবে। কারখানার অভ্যন্তরে মেশিনসমূহ এমনভাবে পুনঃস্থাপন করতে হবে যাতে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকে। প্রতিটি শ্রমিককে কারখানা থেকে মাস্ক, গ্লাভস, হেডকাভারসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য-সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করতে হবে। এ সময়ে কোন শ্রমিকের বেতন-ভাতা বকেয়া রাখা যাবে না, কোনো কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই এবং লে-অফ করা যাবে না। করোনা মহাবিপর্যয়ের মধ্যে কর্মরত সকল শ্রমিককে ঝুঁকি ভাতা প্রদান করতে হবে।
সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় আরও অংশ নেন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষী চক্রবর্তী, রফিকুজ্জামান লায়েক, মিহির ঘোষ, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আহসান হাবিব লাবলু, রুহিন হোসেন প্রিন্স, জলি তালুকদার, মাহবুবুল আলম, ডা. ফজলুর রহমান।
জরুরি প্রয়োজনে খুলে দেয়া গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে সরকার ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা মনিটর করার জন্য সিপিবি পক্ষ থেকে আট সদস্য বিশিষ্ট একটি ‘গার্মেন্টস কারখানা মনিটরিং সেল’ গঠন করা হয়ে বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২০
আরকেআর/এইচএমএস/ইউবি