নেতারা বলেন, দেশের ৫০ লাখ কৃষক পাট চাষের সাথে যুক্ত। পাট ও পাট শিল্পের সাথে ৪ কোটি মানুষের জীবন জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে।
সোমবার (০৬ জুলাই) ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে ভিডিও কনফারেন্স এসব কথা বলেন নেতারা।
সভার প্রস্তাবে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের প্রতিবাদে পাটকল শ্রমিক, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ নয়, চালু রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি সভায় পাটশিল্প পরিস্থিতির রিপোর্ট তুলে ধরেন। আলোচনায় অংশ নেন—শুশান্ত দাস, মাহমুদুল হাসান মানিক, কামরূল আহসান, আমিনুল ইসলাম গোলাপ, হাজি বশিরুল আলম, এনামুল হক এমরান, নজরুল ইসলাম হাক্কানী প্রমুখ।
প্রস্তাবে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ২০১০ সালে পাটের পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে পাটকমিশন গঠন করেছিলেন, যার উৎসাহে পাটের জিনোম আবিষ্কৃত হয়েছে; এখন এমন কি ঘটলো যার কারণে পাটকল বন্ধ করে দেয়া এবং পাট অর্থনীতিকে বাতিলের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে হলো?
সভায় আরও বলা হয়, পাট লুটপাটের দুর্নীতিকে আড়াল করে লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাটকলকে চিহ্নিত করে এর দায় শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে সরকার এর সমাপ্তি টানতে চাইছে। এটা ‘উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর কৌশল’, যা পূর্ববর্তী বিএনপি-জামাত সরকারের বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতি কৌশলের অনুসরণ এবং সাম্রাজ্যবাদের প্রণীত উদারিকরণ নীতির বাস্তবায়ন মাত্র। পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করার দায় শ্রমিকের নয় বরং যারা এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তাদের; অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পাট শিল্পকে লোকসানি খাতে পরিণত করা হয়েছে।
পাট শিল্পের ভরাডুবির জন্য দায়ী বিজেএমসি নামক মাথাভারী প্রশাসন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা যারা পাট ক্রয়ে দুর্নীতি, মৌসুমে পাট সরবরাহে অনিয়ম, অসময়ে বেশীদামে পাট ক্রয় এবং উৎপাদিত পাট পণ্য বিপণনে ব্যর্থতা দেখিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ পিপিপি’র নামে লুটপাটকারীদের হাতে ছেড়ে না দিয়ে পাটকলের পুরোনো মেশিনের বদলে উন্নত প্রযুক্তির আধুনিক যন্ত্রাংশ স্থাপন করে এই শিল্পকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার আহ্বান জানান ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বিদায়ের জন্য কথিত ৫০০০ হাজার কোটি টাকার গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের পরিবর্তে ১২০০ কোটি টাকায় পাটকল আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি সংযোজনের বিকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করে পাটশিল্প, পাটকল ও শ্রমিক রক্ষার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, সরকারের হিসাব মতে বিগত ৪৪ বছরে পাটশিল্পে লোকসানের পরিমাণ ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা; সেই হিসেব টাকার অংকে প্রতি বছর লোকসান হয়েছে ২৩৮.৬৩ কোটি টাকা মাত্র। অথচ বিমান, রেল ও বিদ্যুৎ সহ অন্যান্য খাতে প্রতি বছর যে পরিমাণ ভুর্তুকি দেয়া হয় তার জবাব কে দেবে? এ কারণে সে সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে? বিদ্যুতের কুইক রেন্টালকে অলস বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা দেয়া হচ্ছে কার স্বার্থে। এ সকল ক্ষেত্রে অর্থের যে পরিমাণ অপচয় হচ্ছে সেই অর্থে পাটশিল্পে ৫০ বছরে লোকসানের পরিমাণ অনেক কম।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২০
ডিএন/এমজেএফ