ঢাকা: রোহিঙ্গা সংকটের তিন বছর পেরিয়ে চতুর্থ বছরে পদার্পণ করলেও প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি না থাকায় রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রশ্নে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আসম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার বলেছেন, অব্যাহত জাতিগত নিপীড়ন ও নির্যাতনের মুখে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকটের নব পর্যায়ের তিন বছর অতিক্রম হচ্ছে আজ। এ সংকট দীর্ঘায়িত হলে একে ঘিরে বাংলাদেশের নিরাপত্তাসহ নানামুখী ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট হিসেবে স্বীকৃত রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না বরং তিন বছরে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর রোহিঙ্গা বিরোধী অভিযানকে নিন্দা জানানো, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এ পর্যন্ত তিনবার প্রস্তাব গ্রহণের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তি করলেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে বাংলাদেশ কূটনীতির চোরাবালিতে আটকে গেছে। এ চুক্তির গোলকধাঁধার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিভ্রান্ত হচ্ছে। রোহিঙ্গা সংকটকে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে বলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও আলোচনা তোলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের সঙ্গে এখন দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ব্যাপারেও মিয়ানমারের অনীহা প্রকাশ পাচ্ছে।
তারা আরও বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সেদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিপীড়ন ও গণহত্যা চালানোর প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। উচ্চ জন্মহারের কারণে এ সংখ্যা এখন প্রায় ১২ লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত তিন বছর আলাপ-আলোচনা, চুক্তি, তালিকা বিনিময় কোনো ক্ষেত্রেই ন্যূনতম অগ্রগতি নেই। সংকটের দ্রুত সমাধান হচ্ছে না বরং রোহিঙ্গারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। রোহিঙ্গাদের কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি মাদক ও মানবপাচারসহ নানা সমস্যার ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। এ সংকট যত দীর্ঘায়িত হবে তত নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
বিবৃতিতে তারা বলেন ‘বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। করোনা ও করোনা উত্তর অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত বিশ্ব পরিস্থিতি থেকে যেন এ বিষয়টি হারিয়ে না যায় সে বিষয়েও সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। কিছুদিন পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসবে। বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গাদের দুরবস্থা এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাসহ এ বিষয়টি উত্থাপন করতে হবে। দ্রুত আন্তর্জাতিক পরিসরে এবং জাতিসংঘে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিস্তারিত প্রস্তাব উত্থাপন করতে হবে ও এ প্রস্তাবের সপক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন গড়ে তোলার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২০
এমএইচ/আরআইএস/