ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

১৬ বছরেও হয়নি বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগের কমিটি

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২০
১৬ বছরেও হয়নি বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগের কমিটি ছাত্রলীগের লোগো

সিলেট: সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের এলাকায় ১৬ বছর ধরে হয়নি ছাত্রলীগের কমিটি। যে কারণে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেড়েছে গ্রুপিং ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

ছত্রভঙ্গ হয়ে ছাত্রলীগের এক আহ্বায়ক কমিটি এখন সাতটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কমিটি না থাকায় সিলেটের বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগ এখন ‘ভাইলীগে’ পরিণত হয়েছে!
অভিভাবকহীন হয়ে পড়ায় বিয়ানীবাজার উপজেলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বর্তমানে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও হানাহানির ঘটনায় লিটু নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে অনেককে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৪ সালে সর্বশেষ বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। বর্তমান বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জামাল হোসেন ছিলেন ওই কমিটির আহ্বায়ক। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল হোসেন পল্লব ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বর্তমানে ফ্রান্স প্রবাসী।

নেতাকর্মীরা জানান, ২০১২ সালে তৎকালীন সিলেট জেলা ছাত্রলীগ এই আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করলেও নতুন কমিটির দেখা মেলেনি। ফলে অভিভাবকহীন হয়ে উপজেলা ছাত্রলীগ ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, স্থানীয় কয়েকজন নেতার কোন্দলের কারণে বিলুপ্ত কমিটি আলোর মুখ দেখেনি গত ষোল বছরেও। যে কারণে মেধাবীরা ছাত্রলীগের পরিচয় না পেয়ে অভিমানে রাজনীতি থেকে অনেকে দূরে সরে গেছেন। আবার অনেকে রাজনীতির বাইরে থাকলেও ‘অন্যতম ছাত্রনেতা’ পদবি ব্যবহার করে নিজেদের ছাত্র রাজনীতিতে জিইয়ে রেখেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে পৌর শহর ও উপজেলা সরকারি কলেজে অন্যান্য দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর তৎপরতা নেই। শিবির ও ছাত্রদল নামে মাত্র থাকলেও কার্যত তাদের কোনো তৎপরতা নেই। এ অবস্থায় নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অঙ্গহানি হয়েছে শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মীর।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রতিশ্রুতি দিলেও কমিটি দিতে ব্যর্থ হন। বিগত দিনে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সব গ্রুপের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসলেও কমিটি দিতে সক্ষম হননি।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কেবল নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে এবং দলীয় বিভিন্ন কার্যক্রম সফল করতে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করলেও অদৃশ্য কারণে কমিটি না দিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দায় এড়াতে পারেন না।

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা কে এইচ সুমন বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় কতিপয় নেতাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কারণে এক যুগের বেশি সময় ধরে কমিটি হয়নি। স্থানীয় নেতাদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। যে কারণে বিভাজন, গ্রুপিং ও কোন্দলে জড়াচ্ছে স্থানীয় ছাত্রলীগ। কমিটি না থাকায় অনেক মেধাবী নেতা ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে সরে গেছেন।

বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল হোসেন তারেক বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রলীগ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার পেছনে শতভাগ দায়ী স্থানীয় সংসদ সদস্য। তার সদিচ্ছার অভাবেই এমনটি হয়েছে। ফায়দা নিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। তারা বলয় ভারী করতে শিবির ও বিএনপি থেকে সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ করিয়েছেন।

তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে এক দলীয় রাজনীতিতে নেতারা সংগঠনকে চাঙা না করে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। শুধু নির্বাচন কেন্দ্রিক আশ্বাসে বন্দি থেকেছে ছাত্রলীগের কমিটি। হিংসাত্মক রাজনীতির বলি হয়ে অনেক নেতাকর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। অনেকে রাজনীতি থেকে সরে গেছেন। যা আগামী দিনের জন্য অশনি সংকেত।

এ বিষয়ে জানতে সিলেট-৬ আসনের (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) সংসদ সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২০
এনইউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।