ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আওয়ামী লীগ সংবিধান লঙ্ঘন করছে। এজন্য তাদের অবশ্যই একদিন না একদিন জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের নেত্রী যিনি দীর্ঘ ৯ বছর সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রের জন্যে, তাকে সম্পূর্ণ বিনাদোষে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। এক লাখের উপরে মিথ্যা মামলায় ৩৫ লাখের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়েছে। প্রায় ৯শ’ মানুষ গুম হয়ে গেছে, হত্যা হয়েছে হাজার হাজার। মানবাধিকার লঙ্ঘন আজকে আওয়ামী লীগের একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই দিনটি যখন আমরা পালন করছি, আসুন আমরা সবাই সচেতন হই। আমরা দেশের অবস্থা সম্পর্কে, বিশ্বের অবস্থা সম্পর্কে আরো ভালো করে জানি—কীভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমাদেরই আজ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
গুম হওয়া পরিবারের আহাজারির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি অনেকের বাসায় গিয়েছি। তাদের মা-বোন-ভাই এখনো যে আহজারি— এটা কখনোই মেনে নেওয়ার মতো নয়। কিছুক্ষণ আগে আমাকে ফোন করেছিলেন হারিয়ে যাওয়া মুন্নার মা। তিনি বলছিলেন যে, বাবা আমার ছেলেটা হারিয়ে যাওয়ার ৮ বছর হলো। তাকে খুঁজতে গিয়ে বাবাও হারিয়ে গেল!
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে ইলিয়াস আলীর বাসায় যখন আমি যাই গুম হওয়ার দিনটিতে। তার ছোট্ট মেয়েটি যার বয়স ৬ বছর ছিলো এখন তার বয়স প্রায় ১৩/১৪ বছর। তার চোখের দিকে আমি তাঁকাতে পারি না— এটা হলো বাস্তবতা।
নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে যখন আমরা দেখি আমাদের সংবিধানে যেটা আছে— যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা পার্লামেন্ট গঠন করব, প্রতিনিধি নির্বাচন করব, পার্লামেন্ট গঠন করে দেশ পরিচালনা করব সেই নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট নিয়ে চলে যায়।
তিনি বলেন, আজকেও ২২টি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। আমি ইতোমধ্যে যা খবর পেয়েছি, প্রায় প্রত্যেকটি পৌরসভা নির্বাচনে সরকারি দলের লোকেরা দখল করে নিয়েছে পুলিশের সাহায্যে, রাষ্ট্রের সাহায্যে— এই হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।
সম্প্রতি ভাস্কর্য ভাঙার অভিযোগে একটি মামলা দায়েরের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, কয়েকদিন আগে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং আমার বিরুদ্ধে আরো একটি নতুন মামলা আওয়ামী লীগের একটি সংগঠনের প্রেসিডেন্ট করেছেন যে, আমরা উস্কানি দিয়েছি। এই সমস্ত অপকর্ম যেটা আওয়ামী লীগ করছে সেই অপকর্মগুলোতে। এভাবেই বাংলাদেশ চলছে।
ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কূটনীতিকরা অংশ নেওয়ায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ‘অ্যাবসেন্স অব ডেমোক্রেসি অ্যান্ড সিস্টেমেটিক হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন্স বাই স্টেট এপারেটাস’ শীর্ষক গ্রন্থের উদ্বোধন উপলক্ষে এই ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা আয়োজিত হয়। বিএনপির মানবাধিকার টিমের সম্পাদনায় ১১৬ পৃষ্ঠার বইয়ে ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সালের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা ও তথ্য প্রমাণাদি তুলে ধরা হয়েছে।
ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, তুরস্ক, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, জাপান, ওমান, প্যালেস্টাইনের কূটনীতিকরা এবং জাতিসংঘ, আইআরআই, আইসিআরসি প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানের পরিচালনায় ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গুম হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াস ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি ও পুলিশি নির্যাতনে গুরুতর আহত ছাত্রদলের জাহাঙ্গীর আলম বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২০
এমএইচ/এমজেএফ