নোয়াখালী: প্রশাসনের কিছু লোক বেশি উড়তেছে, তাদের বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আব্দুল কাদের মির্জা। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।
প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে এ মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘তারা মনে করে শেখ হাসিনাকে তারা ক্ষমতায় এনেছে। শেখ হাসিনা চাইছেন ফল, তারা এনে দিয়েছে গাছসহ। অতি উৎসাহী প্রশাসনের কিছু লোক এসব করেছে শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। তারা বেশি উড়তেছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত। ’
‘আমেরিকায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে যে উপলব্ধি হয়েছে, সেটি আমি বলেছি। আমেরিকা থেকে সুস্থ হয়ে ঢাকা বিমানবন্দরে এসে ঘোষণা দিয়েছি, আমি সাহস করে সত্য কথা বলবো। অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলবো। এ প্রতিজ্ঞা নিয়েই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। আমি নোয়াখালীর অপরাজনীতি, ফেনীর অপরাজনীতির বিষয়ে নেত্রীকে বলতে চেয়েছি। কিন্তু সুযোগ পাইনি। কি জন্য পাইনি? সেখানে কিছু লোকের কান্না দেখি, জানি না প্রধানমন্ত্রী কীভাবে এগুলো সহ্য করেন। এসব মতলবি কান্না, কিছু নেতাদের মতলবি কথা, এগুলো তারা সাজায়-গোছায় বলেন। এসব আমি জীবনেও পারব না,’ যোগ করেন তিনি।
আব্দুল কাদের মির্জা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এনেছেন। কেন এনেছেন? এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা মানুষের ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, কিন্তু এখনো ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। একমাত্র শেখ হাসিনাই পারবেন মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। আর কেউ পারবেন না। ’
‘খালেদা জিয়া ঘরে ঢুকে গেছেন। তার ছেলের কথাবার্তার ঠিক নাই। তাকে দিয়ে বিএনপির রাজনীতি অচল। মওদুদ সাহেবও অসুস্থ। আর কোনো নেতাও নেই। শেখ হাসিনা সাহসী নেত্রী। ১৭ বার মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে তাকে। কিন্তু তাকে আল্লাহ রক্ষা করেছেন। তিনিই পারবেন মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে। শেখ হাসিনা ভোটের অধিকার হরণ করেননি, ভোটের অধিকার হরণ করেছেন, জিয়াউর রহমান; হ্যাঁ না ভোটের মাধ্যমে,’ যোগ করেন আব্দুল কাদের।
শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক নির্বাচনী পথসভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল কাদের মির্জা ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে হত্যার ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, ‘একজন উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলি করে, গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, আমি এগুলো বললে খারাপ। টেন্ডারবাজি করে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছে। গরিব পুলিশের চাকরি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা কামিয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিয়নের চাকরি দিতেও পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসের পিয়নের চাকরি দিতে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছে। এটা কি রাজনীতি? এ কথাগুলো বলছি পরিবর্তনের জন্য। ’
তিনি বলেন, ‘নেত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। কিন্তু আমাদের প্রশাসন, দলের নেতারা কি তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন? পারেননি। এখন নেত্রী আপনি সিদ্ধান্ত দেন, দলের কোনো এমপি, জনপ্রতিনিধি হতে হলে মাদক ও নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, তারা দলের কোনো পর্যায়ের নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না। তাহলে দলের ভেতর অনিয়ম কমবে। ’
‘আমি অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো। তাতে কেউ বহিষ্কারের কথা বলুক আর মেরে ফেলার কথা বলুক, আমি কবর ঠিক করে রেখেছি। হাসরের দিন যারা এসব করছে, তাদের সঙ্গে দেখা হবে,’ যোগ করেন তিনি।
নির্বাচনী প্রচারণার একপর্যায়ে আব্দুল কাদের মির্জা স্বতন্ত্র প্রার্থী (জামায়াত) মাওলানা মোশাররফ হোসেনের মুখোমুখি হলে দু’জন কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করেন। এসময় নির্বাচনি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন এবং একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও অবাধ নির্বাচন উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
এসময় পথসভায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আজম পাশা চৌধুরী রোমেলসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২০
এসআই