বাগেরহাট: বিএনপির ঘাটি বলে খ্যাত বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। সীমানা জটিলতা নিরসন ও তফসিল ঘোষণার পর থেকে নেতাকর্মীরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে।
নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর পোস্টার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে মোংলা পোর্ট পৌরসভার অলিগলি। মাইকিংও চলছে পুরোদমে। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। যেকোনো মূল্যে এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শেখ আব্দুর রহমানকে মেয়র হিসেবে দেখতে চান দলীয় নেতাকর্মীরা। এজন্য পৌর এলাকার বাইরের দলীয় নেতাকর্মীরাও কাজ করছেন। তবে নিরপেক্ষ ভোট হলে এবং জনগণ কেন্দ্রে যেতে পারলে ধানের শীষের পক্ষেই রায় দেবে বলে দাবি বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী জুলফকিার আলীর।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তার কর্মীদের জন্য সঠিকভাবে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা করতে পারছেন এমন অভিযোগও রয়েছে তার। সাধারণ ভোটররা বলছেন, যোগ্যতা, দক্ষতা এবং সততা ওপর ভিত্তি করেই তারা সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে ভোট দেবেন। মেয়র পদে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ের আভাসও দিচ্ছেন তারা।
মোংলা পোর্ট পৌরসভার ভোটার রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, এই পৌরসভায় দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন বন্ধ ছিল। ১০ বছর পরে এই নির্বাচন আসছে। আমরা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই।
নাসিমা, জেসমিন, রেনু বেগমসহ কয়েকজন নারী বলেন, যে যোগ্য আমরা তাকেই ভোট দিব। আগে পিছে বিভিন্ন সময় যে আমাদের সঙ্গে ছিল আমরা তাকেই ভোট দিতে চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান মেয়র বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. জুলফকিার আলী ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা যেকোনো প্রয়োজনে তাকে পাশে পেয়েছি। তিনি পৌরসভার রাস্তাঘাট ও অব কাঠামোর বিভিন্ন উন্নয়ন করেছেন। আমরা তাকেই ভোট দিব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোংলা পোর্ট পৌরসভায় আওয়ামী লীগের কোন নেতা মেয়র নির্বাচিত হননি। সব সময়ই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এবার যেকোনো মূল্যে আমরা নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে চাই। আমরা সেভাবেই কাজ করছি।
তবে নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী শেখ আব্দুর রহমানের একক আধিপত্য রয়েছে। তার নেতাকর্মীদের কারণে বর্তমান মেয়র বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী জুলফকিার আলীর লোকজন তেমন কাজ করতে পারছেন না এমন অভিযোগ বিএনপি কর্মীদের।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র জুলফিকার আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন মোংলা পোর্ট একটি দেনাগ্রস্ত পৌরসভা ছিল। আমি সেটিকে দেনামুক্ত করেছি। দ্বিতীয় শ্রেণির পৌরসভা থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করেছি। নাগরিকদের সব রকম সুযোগ সুবিধা দিয়ে সবুজ বাসযোগ্য পৌরসভায় রূপান্তরিত করেছি। ১০ বছর ধরে আমি মোংলা পোর্ট পৌরসভা বাসিন্দাদের সঙ্গে ছিলাম। ভবিষ্যতে আমি পৌরবাসীর কাছে সঙ্গে থাকতে চাই। আমার ইতিবাচক কার্যক্রমের কারণেই ভোটাররা আমাকে ভোট দেবে বলে দাবি করেন তিনি।
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জুলফিকার আলী বাংলানিউজকে বলেন, তফসিল ঘোষণার পরেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে এক ধরনের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তারা আমার প্রচারের মাইক বাজাতে দেয় না। আমার পোস্টারও ঠিকমতো লাগাতে দেয় না। আমি বা আমার নেতাকর্মীরা কোথাও নির্বাচনী প্রচারে গেলে একদল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেওয়া শুরু করে। আমরা অনেক সময় বাধ্য হয়ে সেখান থেকে চলে আসি। ইতোমধ্যে কয়েকজন কর্মী হামলারও শিকার হয়েছেন। তবে নির্বাচন অফিসার ও প্রশাসনকে জানালে তারা এখন পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে আমি নির্বাচিত হবো ইনশাআল্লাহ।
এদিকে, বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সুষ্ঠ নির্বাচনে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল। তাই আমরা বহু প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বিজয়ী হতে পছন্দ করি। বিএনপির প্রার্থীকে আমি বা আমার কর্মীরা কখনও কোনো প্রকার বিরক্ত করেনি। আমার পোস্টারের থেকে বিএনপির প্রার্থীর পোস্টার অনেক বেশি। আমার যদি দুটো মাইক বাজে তাহলে বিএনপির প্রার্থীর মাইক বাজে পাঁচটি। তিনি যেসব অভিযোগ করেছেন তা সব মিথ্যে।
শেখ আব্দুর রহমান আরও বলেন, উন্নয়ন যা হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার করেছে। প্রথম শ্রেণি পৌরসভা হিসেবে নাগরিকদের যেসব সুবিধা দেয়ার প্রয়োজন তার কিছুই করেননি বর্তমান মেয়র। আমাকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করেছেন, জনগণ আমাকেই বেছে নেবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উন্নয়ন, দেশ প্রেম, দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ভালবাসা জয় এনে দিবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরাজি বেনজির আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচন সুষ্ঠভাবেই হচ্ছে। নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো প্রকার অনিয়ম পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। যদি কোনো প্রার্থী কোনো প্রকার বল প্রয়োগের চেষ্টা করে তা হলে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। নিরাপত্তার স্বার্থে নির্বাচনের দিন র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও আর্ম ব্যটালিয়ান পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ পৌরসভায় ৩১ হাজার ৫৪৯ জন ভোটার রয়েছেন। মোংলা পোর্ট পৌরসভায় নয়টি ওয়ার্ডে মোট ১২টি কেন্দ্রে এবারই প্রথম ইভিএমে ভোট গ্রহন ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলা। দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭৫ সালে মোংলা উপজেলা শহরের সাড়ে ১৯ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে মোংলা পোর্ট পৌরসভা গঠন করা হয়। ৪৫ বছরের কোনো নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেনি। সর্বশেষ ২০১১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ আব্দুস সালামকে হারিয়ে বিএনপি প্রার্থী জুলফিকার আলী জয়ী হয়েছিলেন। সীমানা জটিলতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হয়নি। বিভিন্ন মামলা ও প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার পরে ১০ বছর পরে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২১
এনটি