ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের কোনো এখতিয়ার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) নেই বলে জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও শাহজাহান ওমর।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেড ফোর্সের ‘এ’ ও ‘বি’ কোম্পানির কমান্ডার মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম এবং ৯ নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর বীর উত্তম এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেন, এগুলো জামুকার কাজ না। জামুকা হলো কে ভাতা পাবে কি পাবে না, কে মুক্তিযোদ্ধা, কে মুক্তিযোদ্ধা হবে না। বীর উত্তম, স্বাধীনতার ঘোষক, জেড ফোর্সের অধিনায়ক, সেক্টর কমান্ডার, সেনাবাহিনী প্রধান, জেনারেল, প্রেসিডেন্ট—তাদের ব্যাপারে এখতিয়ার আছে? হু ইজ জামুকা? কে এদের... কোথায় জিয়াউর রহমান, কোথায় এগুলো?
মেজর হাফিজ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করি, জনগণকে আর হাস্যস্পদ করবেন না। এই উদ্যোগ যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে আপনি আপনার পিতাকে অসম্মান করছেন। এই খেতাব নিলো কি গেলো, কিছু আসে যায় না, তিনি মৃত এখন। খেতাব নিলেও জিয়াউর রহমান জিয়াউর রহমান থাকবেন, লক্ষ-কোটি মানুষের কাছে, অনাগত ভবিষ্যতের কাছে তিনি এই দেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রূপেই ইতিহাসে চিহ্নিত থাকবেন এবং জনগণের হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসন তার চির অম্লান থাকবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, কী কারণে হঠাৎ করে জামুকা একটা প্রস্তাব করলো আমার বোধগম্য নয়। জামুকা কী? মুক্তিযুদ্ধের সময় তিন ধরনের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একটা হচ্ছে মিলিটারি ফোর্স, আরেকটা হলো ফ্রিডম ফাইটার, তিন নম্বর হলো যুদ্ধের শেষ দিকে বিএলএফ নামে একটা সংগঠন গঠন করা হয়েছিলো যেটার বাংলা মুজিব বাহিনী। আমরা যারা মিলিটারি ফোর্স আমাদের কনট্রোল করে কোর নামে একটা সংস্থা আছে- সেন্টার অফিসার্স রেকর্ড অফিস। আমাদের সঙ্গে জামুকার কোনো সম্পর্ক নাই। জামুকা হলো যেমন ফ্রিডম ফাইটার তৎকালীন ছাত্র-কৃষক-যুব-শ্রমিক যারা যুদ্ধে গেছেন, ট্রেনিং করেছেন, আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে যুদ্ধ করেছেন—তাদের ভাতা, তাদের সম্মানী, তাদের সুযোগ-সুবিধা কীভাবে অধিক থেকে অধিকতর দেওয়া যায়, দিস ইজ দ্য জব অব জামুকা। জামুকার কোনো এখতিয়ার নেই আমাদের মিলিটারি অফিসার যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের বিষয়ে কিছু বলা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বীর উত্তম জিয়াউর রহমান যে প্রথম সেক্টর কমান্ডার এবং প্রথম ফোর্সেস কামান্ডার ছিলেন- এটা ঐতিহাসিক সত্য। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তার সক্রিয় অংশগ্রহণ, বুদ্ধিদীপ্ত পরামর্শ এবং সাহসী নেতৃত্বের গাঁথা লিপিবদ্ধ আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় নেতাদের প্রকাশিত গ্রন্থ এবং সেই সময়কার পত্রিকায় সাময়িকীতে। দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, সাংবদিকদের বক্তব্য এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বদলে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা যারা করেছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
জামুকার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের এই সিদ্ধান্ত শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমান ও অবমাননা। এমনকি এই সিদ্ধান্ত তাকে খেতাব প্রদানকারী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বিচার-বুদ্ধির প্রতিও অশ্রদ্ধা প্রকাশ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সভায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
এমএইচ/এমজেএফ