ঢাকা: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রমকে গত ১৪ ডিসেম্বর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ওই শোকজ নোটিশ পেয়ে ১৯ ডিসেম্বর জবাব দেন তিনি।
বরিশালে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের মতো সিনিয়র নেতা থাকতেও মেজর হাফিজকে কেন প্রধান অতিথি করা হলো জানতে চাইলে বরিশালের সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, এ সিদ্ধান্ত কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়েছে।
সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে, মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় মজিবর রহমান বলেন, আমরা এখনও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পাইনি। ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষায় আছি।
অনুমতি না দেওয়া হলে কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই মেয়র বলেন, তাহলে পুরো বরিশাল শহরই মাঠে পরিণত হবে।
মেজর হাফিজের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ধারণা তার শোকজ নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি বিএনপির সব অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে গুলশানের সংবাদ সম্মেলনেও তিনি উপস্থিত থেকে কথা বলেছেন। আর তাকে আমরা প্রধান অতিথি করিনি। কেন্দ্র থেকে এই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর আমাদের আর বক্তব্য থাকে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) মাহবুবুল হক নান্নু বাংলানিউজকে বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালে সমাবেশের আয়োজন করেছে মহানগর কমিটি। ওই সমাবেশে যাকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে তিনি বিতর্কিত। এক এগারোর সময় তার কর্মকাণ্ডে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্দ। দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী ওই সমাবেশে যাবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশালের এক বিএনপি নেতা বাংলানিউজকে বলেন, বরিশাল বিভাগে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর হলেন বীর উত্তম খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা (জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ খেতাব)। বরিশাল অঞ্চল স্বাধীন করার পেছনে তার অনেক অবদান রয়েছে। দলীয় পদবিতে দু’জনই ভাইস চেয়ারম্যান হলেও সিরিয়াল অনুযায়ী শাহজাহান ওমর সিনিয়র। তা ছাড়া সেলিমা রহমান আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য। তারা কেউ ওই সমাবেশে যাবেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক বিএনপি নেতা বলেন, বরিশাল অঞ্চলে মেজর হাফিজ বিএনপির জন্য একটি সম্পদ। একজন বীর বিক্রম। ওই অঞ্চলে বিএনপি নেতাদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশিবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মন্ত্রীও ছিলেন। তিনি দলে কোণঠাসা ছিলেন। দল তাকে এতদিন পর মূল্যায়ন করেছে। এটা দলের হাই কমান্ডের ভালো সিদ্ধান্ত।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস জাহান শিরীন বাংলানিউজকে বলেন, দেশের মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে। বিএনপির যেকোনো কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকে। কিন্তু গণতান্ত্রিক পরিবেশে সভা সমাবেশ করার সুযোগতো এখন নেই। নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা এসবতো আছেই। তারপর প্রশাসনের অযাচিত হস্তক্ষেপ, বাধা থাকে। সবকিছু উপেক্ষা করেও আশা করি সমাবেশ সফল হবে।
সমাবেশের প্রধান অতিথি মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমদকে দল থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছিল সেটা প্রত্যাহার করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বরিশালের সমাবেশের সঙ্গে ওই নোটিশের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।
যতদূর জানি সেলিমা রহমান ও শাহজাহান ওমর বীর উত্তম মেজর হাফিজের চেয়ে সিনিয়র। এ বিষয়ে কিছু বলবেন? জবাবে বিলকিস জাহান বলেন, এটা নিয়ে ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। হাফিজ ভাইও অনেক সিনিয়র নেতা। তিনি একজন বীর বিক্রম খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা। সাবেক মন্ত্রী। এখানে কাউকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সারাদেশে আমাদের আরও সমাবেশ আছে। সেসব সমাবেশে শাহাজাহান ওমর কিংবা সেলিমা আপাকে প্রধান অতিথি করা হতে পারে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ভাগ করে প্রধান অতিথি করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১
এমএইচ/এএ