ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

দেড় যুগ পর উল্লাপাড়া উপজেলা আ.লীগের সম্মেলন

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১
দেড় যুগ পর উল্লাপাড়া উপজেলা আ.লীগের সম্মেলন

সিরাজগঞ্জ: দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পরে শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সিরাজগঞ্জে উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।  

সম্মেলনটি ঘিরে উপজেলার নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা বিরাজ করছে।

তবে সম্মেলনে কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে বিস্তর অভিযোগও রয়েছে। তৃণমূলের ত্যাগী ও বঞ্চিতদের পরিবর্তে জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা নেতাদের কাউন্সিলর করা হয়েছে বলে দলের একটি অংশ দাবি করেছেন।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০০৩ সালে সর্বশেষ উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে একটি সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে চলতি দায়িত্বে থাকা সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শফির অনুপস্থিতিতে মীর শহিদুল ইসলাম পুন্নকে আহ্বায়ক ও সংসদ সদস্য তানভীর ইমামকে সাধারণ সম্পাদক করে এক তরফা কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি অবগত হলে সম্মেলন বাতিল করে শহিদুল ইসলাম পুন্নর নেতৃত্বে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই থেকে আহ্বায়ক কমিটি দ্বারাই চলছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। শনিবার ১৮ বছর পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।  

সম্মেলনে সভাপতি পদে সাবেক এমপি, বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শফি, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ফয়সাল কাদের রুমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহেদুল হক। ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা মোট ৪৫৮ জন কাউন্সিলর গোপন ব্যালটে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।  

এদিকে এই সম্মেলনের আগে উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন শাখা কমিটি গঠন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তোলেন দলের একটি অংশ। তাদের অভিযোগ ইউনিয়নগুলোতে আওয়ামী লীগের কমিটি নয় ভাইলীগের কমিটি হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত থেকে অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা কমিটিগুলো গঠন হয়েছে বলে দাবি অনেকের। এসব বিষয়ে জেলা ও কেন্দীয় আওয়ামী লীগ বরাবর লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে।  

পঞ্চক্রোশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম ফিরোজ বাংলানিউজকে বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করেও আমি দলের কোনো পদে থাকতে পারলাম না। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আমার ইউনিয়নে লোক দেখানো কাউন্সিল হয়েছে। সেই কাউন্সিলে স্থানীয় জামায়াত নেতার ছেলে আতিকুজ্জামান ডেভিটকে সভাপতি করে অন্তত এক ডজন বিএনপি থেকে আসা নেতা-কর্মীদের পদ দেওয়া হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনে জামায়াত ও বিএনপির ছয়জন কাউন্সিলর রয়েছেন।

বড় পাঙ্গাসী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু বক্কার সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, ২০২০ সালে আমাদের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে, সেখানে অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে নেতা বানানো হয়েছে। তারা দলেও যোগ দেয়নি অথচ কমিটির পদে রাখা হয়েছে।  

তিনি বলেন, চাকশার শওকত ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে থেকেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদ পেয়েছেন। চক পাঙ্গাসির আমিনুল ইসলাম জামায়াতের সক্রিয় সদস্য হয়েও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। এরা দু’জন ২৭ ফেব্রুয়ারির সম্মেলনে কাউন্সিলর হয়েছেন। এসব বিষয়ে সব তথ্য উপাত্তসহ দলের জেলা ও কেন্দ্রে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।  

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক নবী নেওয়াজ খান বিনু বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৪ সালে উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলাম আমি। ওই কমিটির আহ্বায়ক মীর শহিদুল ইসলাম পূন্নর মৃত্যুর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে ও অপর নেতা মাসুমকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়। এখানে এমপির মতের বিরুদ্ধে গেলেই তাকে নানাভাবে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ২৭ তারিখের সম্মেলনে সব কিছুর জবাব কাউন্সিলররা দেবেন আসা করা যাচ্ছে।  

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহেদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, দলের প্রতিটি ইউনিয়ন কমিটি এমপি তানভীর ইমাম সাহেবের আজ্ঞাবহ ইউপি চেয়ারম্যানদের দিয়ে করেছেন। উদুনিয়া ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শরীফের মৃত্যুর পর তারই স্বাক্ষরিত সাদা কাগজে এমপি সাহেব নিজের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। তারপরও জয় আমাদেরই হবে ইনশাল্লাহ।  

সভাপতি প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শফি বাংলানিউজকে বলেন, ইউনিয়নগুলোতে আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি হয়নি। সেখানে আত্মীয়লীগ গঠন হয়েছে। বিষয়গুলো জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে চিঠি দিয়ে অবগত করা হয়েছে। তবুও আমরা সম্মেলনে প্রার্থী হয়েছি।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইউনিয়নগুলোর সম্মেলন হয়েছে। সবার মতামতের ভিত্তিতে কমিটি করা হয়েছে।  

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, উল্লাপাড়া উপজেলার ইউনিয়ন কমিটিগুলো নিয়ে জেলার আগের কমিটির দরখাস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তখন সেটা সমাধান হয়নি। এখন ওই অভিযোগ নিয়ে বসলে সম্মেলন হতে আরও এক বছর সময় লেগে যাবে। এই মুহূর্তে সেটা সমাধান করা সম্ভব নয়। তারপরও আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে চেষ্টা করছি। আমাদের কাছে নতুন কিছু কাউন্সিলর হওয়ার জন্য আবেদন করেছিল। আমরা কিছু সমাধান করেছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।