রাজশাহী: গণতন্ত্র বারবার জীবিত হয়। আর এই গণতন্ত্র ফিরে আসবে রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই।
মঙ্গলবার (২ মার্চ) দুপুর তিনটায় রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এই আহ্বান জানান।
তবে, এই মহাসমাবেশ থেকে আগামী আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণার কথা থাকলেও নেতাদের তেমন কোনো নির্দেশনা ছাড়াই সমাবেশ শেষ করেন।
অচিরেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে জানিয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘এই বৃদ্ধ বয়সে প্রস্তুত আছি। জীবনের শেষবিন্দু রক্ত দিয়ে হলেও গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে আমি আছি। আপনারও সকলে প্রস্তুতি নিন। ’
ইকবাল হাসান টুকু বলেন, দেশ এখন দুর্নীতিতে ভরে গেছে। ফরিদপুরের ছাত্রলীগ সভাপতিই দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। তাহলে রাঘব-বোয়ালরা কত টাকা পাচার করেছে তার হিসাব দেশের জনগণ নেবে।
বিএনপির এই শীর্ষ সারির নেতা বলেন, ‘পুলিশ এখন সরকারি দলের কর্মী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তারাই ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে। তবে, স্বাধীনতার আগে থেকেই দেশের নানা সমস্যার সমাধান হয়েছে রাজপথে। এবারও রাজপথেই ফয়সালা হবে। ’
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.) আবদুল লতিফ ঢাকা থেকে আন্দোলন জোরদার করার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সাতদিনের মধ্যে সরকারের পতন দেখতে পাব। এর জন্য ঢাকার রাজপথে রক্ত দিতে হবে। রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রামে আন্দোলন করে কিছু হবে না। ঢাকাকে সুসংগঠিত করতে হবে। ’
পরে বক্তব্য দেওয়ার সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনও রাজধানী ঢাকায় আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা দেন।
ইশরাক বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আজ একটা সুন্দর পরিবেশ থাকার কথা ছিল। তার বদলে আমাদের আন্দোলনের বার্তা নিয়ে রাজশাহী আসতে হয়েছে। আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। ’
বক্তব্য রাখতে গিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আজ জাতীয় ভোটার দিবস। অথচ মানুষ ভোটই দিতে পারে না। আমরা এমন অবস্থা চাই না। সে কারণে আন্দোলনের আর কোন বিকল্প নেই। ’
মহাসমাবেশ নির্বাচন ব্যবস্থার সমালোচনা করে বিএনপির এই মেয়র প্রার্থীরা এই সরকারের অধীনে বিএনপি আর নির্বাচনে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এ সময় তারা সম্প্রতিকালের নির্বাচনসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতা সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন।
তবে এই মহাসমাবেশ থেকে আগামী আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণার কথা থাকলেও নেতাদের তেমন কোনো নির্দেশনা ছাড়াই সমাবেশ শেষ করেন। এতে নেতাকর্মী হতাশ হন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, হারুনার রশিদ এমপি, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত।
এছাড়াও বক্তব্য দেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সামসুল হক প্রামাণিক, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা।
এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
সমাবেশ পরিচালনা করেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। সমাবেশে বিভাগের আট জেলার সভাপতি ও সম্পাদকসহ নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
দুপুর তিনটায় রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিতে শুরু করেন দলটির নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলের দিয়ে যেতে শুরু করে। এতে সমাবেশস্থলে উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। বিএনপির দাবি অনুযায়ী চারটি স্পটে অনুমতি না মেলায় নাইস গার্ডেনের মধ্যেই সমাবেশের অস্থায়ী মঞ্চ করা হয়।
শহীদ জিয়ার খেতাব বাতিলের প্রতিবাদ, দেশব্যাপী নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন, ভোট চুরি ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজশাহী বিভাগীয় মহাসমাবেশের আয়োজন করে রাজশাহী মহানগর বিএনপি।
বিএনপির এই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কায় সোমবার (১ মার্চ) সকাল থেকে রাজশাহীর সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। এই দুইদিন রাজশাহী থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দূরপাল্লার কোনো রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। আন্তঃজেলা রুটের সকল বাস চলাচল বন্ধ ছিল। বিএনপির এই বিভাগীয় মহাসমাবেশ শেষ হলে সন্ধ্যায় রাজশাহী থেকে আবারও সকল রুটের বাস চলাচল শুরু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২১
এসএস/এএটি