ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: ড. মোশাররফ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২১
জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: ড. মোশাররফ

ঢাকা: জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, বহু বইয়ে লেখা আছে ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান প্রথম নিজের নামে, পরের দিন ২৭ মার্চ সাড়ে সাতটার সময় আবার শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

২৫, ২৬ ও ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ড ইতিহাসের অংশ। বহু বইয়ে লেখা আছে। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেদিন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বললেন, ২৫, ২৬, ২৭ তারিখ জিয়াউর রহমান নাকি বাঙালিদের হত্যা করেছে—এটা দুঃখজনক, বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. মোশাররফ বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সেদিন বললেন—৭ মার্চের ভাষণ স্বাধীনতার ঘোষণা। যদি তাই হয়, তাহলে তো ৭ মার্চ থেকে স্বাধীনতা দিবস হওয়ার কথা। সেটা কিন্তু ২৬ মার্চ। তারপরে আরও কথা আছে, ৭ মার্চের পরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, বিরোধীদলের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় এসে ১৭ তারিখ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত আলোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। তখন আওয়ামী লীগ ২৭ মার্চ হরতাল ডেকেছিল। যদি ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা হয়, তাহলে পরের এই ঘটনাগুলি ঘটা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।

তিনি আরও বলেন, যখন আমরা প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরছি তখন এটাকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীও কথা বলছেন। কিন্তু গত বছর এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, ৭ মার্চের বক্তব্যে স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল না। সিরাজুল আলম খান চেয়েছিলেন, ছাত্ররা চেয়েছিল যে, স্বাধীনতার ঘোষণা হোক। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। এটা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, এখনও রেকর্ড আছে। অথচ সেদিন বললেন ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ড. মোশাররফ বলেন, সেদিন আর একটি কথা (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নাকি ২৫ ও ২৬ তারিখ বাঙালিদের হত্যা করেছে। অথচ বিভিন্ন বইয়ে ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে—২৫ এর কালরাত্রিতে যখন ঢাকায় গণহত্যা শুরু হয়, তখন চট্টগ্রামেও ২০ বেলুচ রেজিমেন্ট চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে প্রায় এক হাজার বাঙালিকে হত্যা করেছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান ছিলেন ৮ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে। হেডকোয়ার্টার ছিল ষোলশহর। প্রধান ছিলেন বিগ্রেডিয়ার জানজুয়া। জানজুয়া জিয়াউর রহমানকে রাত দশটার দিকে পোর্টে পাঠিয়েছিলেন সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামানোর জন্য। কিন্তু পথিমধ্যে যখন তিনি (জিয়া) খবর পান যে, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে ২০ বেলুচ রেজিমেন্ট বাঙালিদের হত্যা করছে, তখন তিনি পোর্টের দিকে না গিয়ে ফিরে এসে ৮ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সামনে বাঙালি অফিসার মীর শওকত আলী, কর্নেল অলি, ক্যাপ্টেন শামসুজ্জামানকে নিয়ে প্রথম পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করেন। এরপরে বাঙালিদের অস্ত্র সজ্জিত করেন। ইপিআরের ক্যাম্প ছিল কাছাকাছি, মেজর রফিকের সাথে যোগাযোগ করেন। মেজর রফিক ইপিআরের সৈনিকদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের সাথে যোগ দেন। শেষ রাতে জিয়াউর রহমান একটি ড্রামের উপর দাঁড়িয়ে ‘উই রিভল্ট’ বলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রিভল্ট করেন। এরপর তিনি ২৬ তারিখ সকালে সোলশহর ৮ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের হেডকোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে কালুরঘাট ব্রিজ পার হয়ে পটিয়ায় গিয়ে সকাল ৯টায় ক্যাম্প স্থাপন করেন। পরে ২৬ তারিখ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে এসে জিয়াউর রহমান প্রথম নিজের নামে ও পরের দিন ২৭ তারিখ সাড়ে সাতটার সময় আবার শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের নামে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২১
এমএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।