ঢাকা: ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার শর্তে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় খালেদা জিয়া দেশের বাইরে যেতে পারবেন না বলেও শর্ত রয়েছে।
সোমবার (১৫ মার্চ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আগেও চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ৪০১ এর এক ধারার দণ্ডাদেশ স্থগিত করেছেন। সে অনুযায়ী বাসায় থেকে খালেদা জিয়া সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন, কিন্তু তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। এ শর্তে তার দণ্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। তার ভাই শামীম ইস্কান্দার কিছুদিন আগে আমাদের এখানে এসে সময় বাড়ানোর জন্য আবার একটি আবেদন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সে আবেদনে সাড়া দিয়ে আরও ছয় মাস বাড়িয়েছেন, যা আগামী ২৫ মার্চ থেকে কার্যকর হবে। ’
খালেদা জিয়া কোথায় চিকিৎসা নেবেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন না। তবে দেশের ভেতরে সব জায়গায় তিনি চিকিৎসা নিতে পারবেন। নিজ বাসায় থেকে যে কোনো হাসপাতালে যেতে পারবেন। হাসপাতালে যদি প্রয়োজন হয় যাবেন, প্রয়োজন না হলে কেন যাবেন? ইমার্জেন্সি যদি আসে তাহলে আমাদের সেখানে কোনো বাধা নেই। ’
সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর শর্তের বিষয়ে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শর্ত দুইটা। খালেদা জিয়া ঢাকার নিজ বাসা থেকে চিকিৎসা নেবেন। ইমার্জেন্সি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা নেবেন। কোন হাসপাতালে যদি কোনো চেক-আপ করতে হয়, সেখানে তিনি যাবেন। আগের যে শর্ত ছিল, সে শর্তেই তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। ’
আগের শর্তে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য শুধু বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, তবে বিএনপি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার কথা বারবার বলে আসছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের প্রশ্ন আসেনি। আমাদের এ শর্তে কোনো হাসপাতালের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তিনি বাসায় অবস্থান করে যে কোনো চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন। যদি তার এক্সরে করার প্রয়োজন হয়, তখন তাকে হাসপাতালে গিয়ে এক্সরে করে আবার বাসায় ফিরতে হবে। ’
বিদেশ থেকে কোনো চিকিৎসক আসতে পারবেন কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের চিকিৎসকরা জানেন এবং অন্যরা জানেন এবং তিনি আবেদনও করেন নি। তিনি নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন। যদি কোনো প্রয়োজন হয়, তখন তিনি হাসপাতালের সহযোগিতা নিতে পারবেন। ’
গত ২ মার্চ পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো, মওকুফ এবং শর্ত শিথিল করে বিদেশে পাঠানোর আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। এ আবেদনের বিষয়ে মতামত দিতে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
গত ৮ মার্চ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আগের শর্তে আরও ছয় মাস বাড়ানোর বিষয়ে মতামত দেয় আইন মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতসহ এ সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন। খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার এ সাজা স্থগিতের জন্য আবেদন করায় ২৫ মাস কারাভোগের পর খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে গত বছরের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করে সরকার। এরপর দ্বিতীয় দফায় ফের ছয় মাস সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সে মেয়াদ আগামী ২৫ মার্চ শেষ হচ্ছে। একইসঙ্গে দণ্ডাদেশ মওকুফ করা যায় কি না, সে প্রসঙ্গেও তারা আর্জি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
জিসিজি/এফএম