ঢাকা: সহিংসতার দায়ে গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে থাকা হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কাছ থেকে প্রতিনিয়তই মিলছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। সরকার পতনে দীর্ঘ মেয়াদের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে মাদ্রাসা ছাত্রদের ব্যবহার করে ক্ষমতায় যেতে হেফাজতের সহিংসতার বিষয়টিও এখন অনেকটাই স্পষ্ট।
পুলিশ জানায়, মামুনুলকে গ্রেফতারের সময় তার ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা যায়নি। ওই ফোনে নানা ক্লু লুকিয়ে থাকতে পারে ধারণায় ফোনটি উদ্ধারে তৎপর হয় পুলিশ। এরপর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার একটি কক্ষ থেকে ফোনটি উদ্ধার করা হয়। ফোনের বিভিন্ন অ্যাপসের চ্যাটলিস্ট থেকে নানা তথ্য মিলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামুনুলের ফোনটি উদ্ধারের পর সেটিকে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে মোবাইলের মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন অ্যাপসের চ্যাটিং লিস্ট থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অর্থ সংগ্রহের তথ্য মিলেছে।
এদিকে মামুনুল হকের ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের চিত্র দেখা গেছে। ভারতের বাবরি মসজিদ, কওমি মাদরাসার ছাত্রদের শিক্ষা ও হেফাজতে ইসলামের নাম করে মামুনুল মধ্যপ্রাচ্য থেকে কোটি কোটি টাকা এনেছেন। সেসব টাকা বিভিন্ন উগ্রবাদী নাশকতামূলক কাজে ব্যয় করা হয়।
হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও সম্প্রতি বিলুপ্ত হওয়া কমিটির কেন্দ্রীয় অনেক নেতারই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাশ থেকেই তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সরকার বিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকার পতনের ছক একেছিলেন মামুনুলসহ হেফাজতের বেশ কয়েকজন নেতা। আর এই হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করে মাদ্রাসার ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন তারা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষীকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানকে ঘিরে গত ২৬ ও ২৭ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালানো হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া থানাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সারাদেশে শতাধিক মামলায় প্রায় এক হাজার জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। মামুনুল হকসহ হেফাজতের নেতৃত্ব পর্যায়ের অন্তত ১৫ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ক্ষমতা দখলের নেশায় হেফাজতের বেশকিছু নেতা উগ্র হয়ে উঠেছিলেন। এজন্য তারা ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে দিতে উগ্রবাদী বক্তব্য দিতেন। এসব বক্তব্যের উদ্দেশ্যই ছিলো সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মভীরু মানুষকে খেপিয়ে তোলা। পাকিস্তানের ‘তেহেরিক-ই-লাব্বায়িক’ নামের সংগঠনের আদলে তারা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে গঠন করে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মতো এ দেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
সূত্র জানায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান ঘিরে শুধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর বাতিলের চেষ্টা নয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক আয়োজিত পুরো অনুষ্ঠানও বানচালের পরিকল্পনা করেছিলেন মামুনুল হক। মামুনুল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে কথিত আন্দোলনের নামে নাশকতার পরিকল্পনা করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশীদ বলেন, মামুনুলের মূল টার্গেট ছিলো সরকার উৎখাত। বাবরি মসজিদের নাম করে ভারত বিরোধী বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ফান্ড কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন তিনি। এর মধ্যে বিশেষ করে, তার মোবাইলে কাতার, দুবাই, পাকিস্তানসহ অনেক দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা আসতো।
তিনি বলেন, মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার ফোনটির খোঁজ পাওয়া যায়। মাদরাসা থেকে ফোনটি উদ্ধারের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। অনেক সোর্স থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা সংগ্রহের তথ্য ফোন থেকেই আমরা পেয়েছি। সিআইডি ও বাংলাদেশ ব্যাংক তার অর্থের বিষয়গুলো আরো বিশদভাবে খতিয়ে দেখবে।
গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৯ এপ্রিল তাকে একটি মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ২৬ এপ্রিল তাকে আদালতে হাজির করে অন্য দুই মামলায় আরো সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২১
পিএম/এএটি