ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আওয়ামী লীগ হীরার টুকরা: শেখ হাসিনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৩ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২১
আওয়ামী লীগ হীরার টুকরা: শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা

ঢাকা: আওয়ামী লীগকে হীরার টুকরার সঙ্গে তুলনা করে দলটির টানা ৪১ বছরের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বারবার আওয়ামী লীগের ওপরে আঘাত এসেছে। তবে আমি বলব, আওয়ামী লীগ হীরার টুকরা।

যতবার কেটেছে ততো আরও জ্বল জ্বল হয়েছে। এ সংগঠনকে ধ্বংস করতে পারেনি, পারবে না।

বুধবার (২৩ জুন) বিকেলে আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় (ভার্চ্যুয়াল) এ কথা বলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন টানা তিন বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বারবার আওয়ামী লীগের ওপরে আঘাত এসেছে। তবে আমি বলব, আওয়ামী লীগ হীরার টুকরা। যতবার কেটেছে ততো আরও জ¦ল জ¦ল হয়েছে, আরো নতুনভাবে জ্যোতি ছড়িয়েছে। কাজেই এই সংগঠনকে ধ্বংস করার যে যতই চেষ্টা করুক। সেটা পারেনি, পারবে না।

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা পরবর্তী সংকটময় সময়ের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আর রেহানা বিদেশে ছিলাম তাই বেঁচে গিয়েছিলাম। এই শোক, ব্যথা, কষ্ট সহ্য করা অনেক কঠিন ছিল। তখন রাজনীতি নিষিদ্ধ। তারপরও চেষ্টা করেছি সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতারাই তো জেলে ছিল অথবা বেঈমানি করে মোশতাকের সঙ্গে গেছে। কার সঙ্গে যোগাযোগ করবো। তবে জেলখানা থেকে যখন সবাই বেরিয়েছে তখন অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।

ছোট বোন শেখ রেহানার ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রেহানা তার আগে থেকে যোগাযোগ করা শুরু করেছে, প্রতিবাদ করেছে। সেইসঙ্গে আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল, যে বাংলাদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন সেই বাংলাদেশকে নিয়ে তার যে স্বপ্ন, তার যে চিন্তা তার যে আদর্শ এটা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না।

১৯৮১ সাল থেকে টানা আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করে শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগে ভাঙন ও বিপর্যয়ের কথা কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন সৃষ্টি হয় তখন থেকে মুসলিম লীগ আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসেছে, সেও আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। ইয়াহিয়া খান এসেছে, সেও চেষ্টা করেছে। কারণ যখন গণহত্যা চালায় একাত্তরে সব থেকে আগে তাদের লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। ঠিক জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছে, এই আওয়ামী লীগকেই ধ্বংস করতে চেয়েছে। জেনারেল এরশাদ এসেও একই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে। আর খালেদা জিয়া এসে তো আরো এক ধাপ ওপরে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ মাটি-মানুষের থেকে উঠে এসেছে। এটা কোনো ক্ষমতা দখলকারীর হাতে গড়া সংগঠন না। মুসলিম লীগ সরকারের অন্যায় প্রতিবাদ করে এই সংগঠন গড়ে উঠেছে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে। যে সংগঠন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে ওঠে, সেই সংগঠনকে এতো সহজে শেষ করে দেওয়া যায় না। হয়ত সাময়িক আঘাত আসে। আওয়ামী লীগের ওপর অনেক বার আঘাত এসেছে। বহুবার আওয়ামী লীগ ভেঙে গেছে। আওয়ামী লীগের ভেতরের লোকরাই তো আওয়ামী লীগের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, মাওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, তিনি সবার আগে আওয়ামী লীগ ভেঙে চলে গেলেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি করতে। ঠিক এভাবে কতবার আওয়ামী লীগ ভেঙেছে? ১৯৮১ সালে আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হল আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য। দুভার্গ্য হলো, আমি প্রবাসে থাকতে যাকে সব থেকে বেশি সংগঠনের জন্য সহযোগিতা করেছি, আমি ফিরে আসলে তিনিই আমাকে সবার আগে ছেড়ে চলে গেলেন। আমাদের আব্দুর রাজ্জাক সাহেব। বারবার তাকে বললাম, আপনার তো যাওয়ার দরকার নাই। আপনি থাকেন, সে পার্টির সেক্রেটারি। না, পার্টি ভেঙে বাকশাল করবো। এরপর ড. কামাল হোসেন, যাকে আমরা রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করালাম, তার নাম ডাক হলো। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বলে তাকে প্রচার করলাম।  তিনি তো বঙ্গবন্ধুর ক্যাবিনেটে একজন মন্ত্রী ছিলেন মাত্র। আমরা প্রচারের মাধ্যমেই তাকে তুলে ধরলাম। যিনি ভালো করে বাংলায় কথাও বলতে পারতেন না। তিনি ১৯৯১ সালে আমার পার্টি ভেঙে চলে গেলেন, আরেকটা পার্টি বানানোরও চেষ্টা করলেন। প্রথমে আওয়ামী লীগই একটা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে, তারপর গণফোরাম করে চলে গেলেন।

১/১১’র সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাবন্দি হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তখন বিরোধী দলে থাকা সত্ত্বেও সবার আগে আমাকেই গ্রেফতার করা হল। যেন আওয়ামী লীগের ওপরেই রোষ; কেন? আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এদেশের গরিব দুঃখী মানুষ তারা পেটে ভাত পায়। তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই পায়। ঘর পায়, চিকিৎসা পায়, লেখাপড়ার সুযোগ পায়; এটা বোধহয় কিছু শ্রেণির পছন্দ না। যারা ওই মিলিটারি ডিটেকটরদের পদলেহন করে চলেছিল, তাদের পছন্দ না। সেজন্য আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে বারবার উঠেপড়ে লাগা।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের গণ মানুষের সংগঠন। অধিকার হারা মানুষ, মানুষের সেই বঞ্চনা, শোষণা তারা দেখেছে, মানুষের কষ্ট, দুঃখ যাতনা তারা উপলব্ধি করেছে। শোষিত-বঞ্চিত জাতির কষ্ট-দুঃখ দূর করার জন্যই আওয়ামী লীগের জন্ম। আওয়ামী লীগ যখনই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে এই বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে যদি বিবেচনা করা যায়, এখানে হ্যাঁ কিছু বাম দল আছে, কিছু দক্ষিণপন্থী আছে। কিন্তু সত্যিকার গণমানুষের দল হিসেবে যদি বাংলাদেশের জন্য কেউ থেকে থাকে সেটা হচ্ছে একমাত্র দল আওয়ামী লীগ।

বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশটাকে জাতির পিতা সুন্দরভাবে সাজাতে চেয়েছিলেন। তিনি তো পরেন নাই করতে, তাকে তো করতে দেওয়া হলো না। তার সেই অসমাপ্ত কাজ আমাদের সমাপ্ত করতে হবে। এবং তার জন্য আওয়ামী লীগকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে, সুখে-দুঃখে সাথী হতে হবে এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
 
সংগঠনকে তৃণমূল থেকে নতুন করে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের কাউন্সিল অধিবেশনগুলো আমরা যথাযথভাবে করতে পারছি না করোনার কারণে। তারপরও সংগঠন যাতে শক্তিশালী হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

তিনি বলেন, আজকে আমরা ক্ষমতায় আছি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর যেন কখনো কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্যেই আমাদের অতন্দ্র প্রহরীর মতো বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকতে হবে।

এ সময় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে অনুষ্ঠিত এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- দলটির সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  মাহবুব উল-আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহিলা সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং আবু আহমেদ মন্নাফীসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের শীর্ষ নেতারা।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্ত থেকে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গণভবন প্রান্ত থেকে সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

সভায় ‘‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বের চার দশক: সংগ্রামী নেতা থেকে কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক’’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটির সম্পাদনা করেন দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪২ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২১
এমইউএম/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।