ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সাড়ে চার বছরেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি, যুবদলে ক্ষোভ

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২১
সাড়ে চার বছরেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি, যুবদলে ক্ষোভ

ঢাকা: বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল। এক সময় সংগঠনটি দলের সবচেয়ে শক্তিশালী ইউনিট ছিল।

বর্তমানে এই সংগঠনের ওপর কমিটি বাণিজ্য ভর করেছে। ফলে দিন দিন দুর্বল থেকে দুর্বলতম সংগঠনে পরিণত হচ্ছে। গত ১৫ বছরে রাজপথে শক্তিশালী কোনো কর্মসূচিও চোখে পড়েনি তাদের। সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাই এসব অভিযোগ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে সাত বছর যুবদলের সভাপতি ছিলেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব। পরে ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময় সুপার ফাইভ কমিটি (পাঁচ জনের কমিটি) অনুমোদন দিয়ে তাদের এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাঁচ জনের ওই কমিটি দীর্ঘ তিন বছর এক মাস ক্ষমতায় থেকে ১০৯ জনকে নতুন করে কমিটিতে যুক্ত করেন ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওই কমিটি হওয়ার কথা ২৬১ সদস্য বিশিষ্ট। ফলে অনেক পদ-পদবী খালি থেকে যায়। কেটে গেছে আরও এক বছরেরও বেশি সময়। কমিটি এখনও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। কবে নাগাদ হবে তাও কেউ বলতে পারেন না।

সূত্র জানায়, কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় সংগঠনটির মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। ত্যাগী ও রাজপথের নেতারা পদ-পদবী পাওয়ার আসায় দীর্ঘদিন অপেক্ষা করলেও কমিটি বর্ধিত হচ্ছে না। এরই মধ্যে সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে একাধিকবার কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দাবি জানানো হয়েছে। যারা দাবি করছেন তাদের সঙ্গে তারেক রহমানের দুবার স্কাইপি বৈঠকও হয়েছে। তিনি শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আশ্বাসও দিয়েছেন। তারপরও কোনো অদৃশ্য সুতার টানে ঘোষণা হচ্ছে না কমিটি।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ১১৪ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণার পর থেকে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেন পদবঞ্চিতরা। ইতোমধ্যে সেই ক্ষোভ কয়েকবার প্রকাশ্যেও এসেছে। ১২ফেব্রুয়ারি-২০২০ নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিতভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার দাবি জানানো হয়। ওই দিন দলীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।

এর ৯/১০ মাস পর ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে পদবঞ্চিতরা এক বৈঠক করেন। তারা ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম দেন। তাদের সেই দাবি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে পদবঞ্চিত মঈনুল ইসলাম হিটু বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। ঈদের পরে নতুন করে আবার কর্মসূচি দেওয়া হবে।

হিটু জানান, গত ২০ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি আলোচনাসভা শেষে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন বের হয়ে যাচ্ছিলেন তখন আমরা কয়েকজন তার কাছে প্রশ্ন করেছিলাম কবে নাগাদ যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। মহাসচিব আমাদের বলেছেন, তিনি এ বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করবেন। পরবর্তীতে কী হয়েছে তা আর জানা যায়নি।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, যুবদলের জেলা-উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের কমিটির কাজ চলমান আছে। এগুলো শেষ হলে কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে।

ত্যাগী নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা বড় দলে এসব থাকেই। সব সময়ই থাকবে। ক্ষোভ থাকবে হতাশা থাকবে।

বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও খুলনা বিভাগীয় টিম প্রধান আলী আকবর চুন্নু বাংলানিউজকে বলেন, যুবদলের ৮২টি সাংগঠনিক জেলায় ৯৫০টি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ৭৯৬টির মতো কমিটি ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। বাকিগুলো করোনার কারণে করা যায়নি। খুব শিগগিরই এসব কমিটি হয়ে যাবে।

তবে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি কবে নাগাদ ঘোষণা হবে সে বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানান আলী আকবর চুন্নু।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ জুলাই ১৮, ২০২১
এমএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।