ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের গৌরীপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি গঠনে অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে আরও ১২ নেতা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
এনিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণার দুই দিনের মধ্যে জেলার গৌরীপুর ও হালুয়াঘাটে নবগঠিত কমিটির মোট ২৩ নেতা পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বৃহস্পতিবার ( ২ সেপ্টেম্বর ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলানিউজের কাছে পদত্যাগ পত্রের অনুলিপি প্রদানের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এর আগে বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে হালুয়াঘাটে স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটির ১১ নেতা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
গৌরীপুর পৌর কমিটির পদত্যাগকারী নেতারা হলেন- নবগঠিত পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক- হোসেন তারেক, যুগ্ম আহ্বায়ক- মাহমুদ জুবায়ের আকাশ, মো. শফিকুর রহমান ও আতিকুর রহমান সোহাগ, সদস্য- আনু মিয়া, আল কাউসার, রিয়াজ হোসেন, আল মাহমুদ মাসুম রনি, আজহারুল ইসলাম নয়ন, সুন্নত আলী, আহমেদ রেজা সাকিব ও মামুন পারভেজ।
পদত্যাগকারী নেতাদের অভিযোগ, সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নিজের অনুগত লোকদের পদ পাইতে দিয়ে পরীক্ষিত ও নির্যাতিতদের বাদ দিয়ে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করেছেন। এতে অযোগ্যদের অবমূল্যায়ন করে সংগঠনকে দূর্বল করা হয়েছে।
অভিযোগে তারা আরও জানায়, পৌর কমিটির আহ্বায়ক শাহীন আলম তারা পেশায় একজন কাঠ ব্যবসায়ী এবং সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর আনিসের ভাতিজা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
অপরদিকে সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম রামগোপালপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে তার কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। এমনকি বিএনপির কোন অঙ্গ সংগঠনের সাথেও তার সম্পৃক্ততা নেই। অথচ পৌর এলাকায় অসংখ্যা ত্যাগী সাবেক ছাত্রনেতা থাকলেও নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য তাকে সদস্য সচিব করেছেন জেলার সাধারণ সম্পাদক।
সূত্র জানায়, এর আগে গত ৩১ আগস্ট এসব বিষয় অবহিত করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন পদ প্রত্যাশী খায়রুল পাশা খেলন ও হোসেন তারেক। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা তথ্য-প্রমাণের এসব বিষয় উপেক্ষা করে কমিটি গঠন করায় এ বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান নবগঠিত কমিটিতে অবমূল্যায়িত নেতারা।
সূত্রমতে, নবগঠিত গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান আল আমিন গত দশ বছর ধরে গাজীপুর জেলার ভোগড়া বাজারে সেইলর মুন নামক একটি ফ্যাক্টরিতে চাকরি করছেন।
অপরদিকে সদস্য সচিব আব্দুল কাদির ঢাকার নিকুঞ্জ এলাকায় বর্তমান সরকারের একজন উপ-সচিবের বাসার কেয়ারটেকার হিসেবে কর্মরত। একই ভাবে এ কমিটির প্রথম সদস্য ইব্রাহিম খলিল মতি ইসলামী ব্যাংক ডৌহাখলা শাখায় কর্মরত। অথচ বিগত আন্দোলন সংগ্রামে হামলা-মামলায় নির্যাতিত নেতাদের বাদ দিয়ে এ কর্মজীবীদের পদে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
এছাড়াও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন ও গৌরীপুর সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্রদল সভাপতি শাজাহান আকন্দ সুমনকে অবমূল্যায়ন করে নবগঠিত কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। যা সংগঠনে অপমানজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলেও দাবি তাদের।
এদিকে বিতর্কিতভাবে স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি গঠন করায় গৌরীপুর উপজেলা-পৌর ও কলেজ ছাত্রদলের সাবেক ১২জন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এক বিবৃতিতে নিন্দা জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, আর্থিক লেনদেনে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করে সাবেক ছাত্রনেতাদের অবমূল্যায়নের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে দল ও সংগঠন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর আনিসের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে সংগঠনের সভাপতি মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কমিটিতে আমরা স্বাক্ষর করলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২১
এএটি