ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বিতর্কিতরা পেলেন নৌকা, ক্ষোভ তৃণমূলে

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২১
বিতর্কিতরা পেলেন নৌকা, ক্ষোভ তৃণমূলে

সিরাজগঞ্জ: দ্বিতীয় দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একাধিক বিতর্কিত প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ায় ফুসে উঠেছে সিরাজগঞ্জের তৃণমূল আওয়ামী লীগ।  

প্রার্থী তালিকায় কর্মী ও জনবিচ্ছিন্ন নেতা, জামায়াত পরিবারের সদস্য এবং বিএনপি নেতার নাম থাকায় বিভিন্ন ইউনিয়নে ইতোমধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

এছাড়াও প্রার্থী বদলের দাবিতে লিখিত অভিযোগও দিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা।  

জানা যায়, দ্বিতীয় দফা ইউপি নির্বাচনে আগামী ১১ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ সদর ও রায়গঞ্জ উপজেলায় ১৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গত ৭ অক্টোবর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়।  

ঘোষিত তালিকায় রয়েছে বিএনপি নেতা, জামায়াত পরিবারের সদস্য, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এমন প্রার্থীর নাম। প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পরিদনই ৮ অক্টোবর থেকেই বিক্ষোভ-সমাবেশের মধ্য দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে দলটির নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে দলের কাছে লিখিত অভিযোগ করে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতারা। পাশাপাশি ঘোষণা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন একাধিক প্রার্থী।  

দলীয় সূত্র জানায়, আগামী ১১ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ সদরের ৮টি ও রায়গঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইউনিয়নগুলো হলো সদর উপজেলার রতনকান্দি, বাগবাটি, বহুলী, শিয়ালকোল, খোকশাবাড়ি, ছোনগাছা, কালিয়া হরিপুর ও সয়দাবাদ, রায়গঞ্জ উপজেলায় ধামাইনগর, সোনাখাড়া, চান্দাইকোনা, ধানগড়া, ব্রহ্মগাছা, ঘুড়কা, ধুবিল, নলকায় এবং পাঙ্গাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে প্রার্থী ঘোষণার পরদিনই বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে বাগবাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী। এখানে জাহাঙ্গীর আলম নেতাকর্মী ও জনবিচ্ছিন্ন দাবি করে দলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
 
বহুলীতে মনোনয়ন পাওয়া মঞ্জুরুল আলমকে নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। মাত্র কয়েকমাস আগে তার বিরুদ্ধে গরু চুরির গডফাদারের অভিযোগ এনে দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী বহুলী বাজারে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে। বিগত বছরগুলোতে মাঝে মধ্যেই সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন মঞ্জুরুল আলম। এখানে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এরা হলেন, সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হক সেখ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী তালুকদার।

আব্দুল বারী তালুকদার বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। জীবনের শেষ সময়ে দলীয় মনোনয়ন আশা করেছিলাম। দল মনোনয়ন দেয়নি তাতে কী। স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।  

শিয়ালকোলে দলের সিনিয়র নেতাদের উপেক্ষা করে ছাত্রলীগ নেতা সেলিম রেজাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে এখানে নৌকার বিজয় নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে রেজুলেশন কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠিয়েছে।  

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আজম তালুকদার বাবলু জানান, বিতর্কিত প্রার্থীকে বাদ দেওয়ার জন্য দলের বিশেষ বর্ধিত সভা করে রেজুলেশন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠিয়েছি। আশা করছি দল বিষয়টির মূল্যায়ন করবে। ইতোমধ্যে ৭ প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলেছি। যদি মনোনয়ন পরিবর্তন না করা হয় তবে সবাই মিলে একক প্রার্থী নির্ধারণ করে স্বতন্ত্র নির্বাচন করা হবে।

কালিয়া হরিপুরে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর মনোনয়ন পাওয়ায় ইউনিয়ন ও ১০টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা জেলা আওয়ামী লীগের কাছে সোমবার (১১ অক্টোবর) লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে বিগত ৫ বছর তিনি দলের কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেননি। উপরন্তু দলের বদনাম করে বেড়িয়েছেন। নেতাকর্মী এবং জনগণের সাথেও তার ছিল না কোনো সম্পর্ক। দায়িত্ব পালনকালে আব্দুস সবুর হতদরিদ্রদের ভিজিডির বরাদ্দও বিভিন্ন ভাতার কার্ড দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়ম করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুদকেও অভিযোগ রয়েছে। তারপরও দল তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে।  

সয়দাবাদে শুন্য থেকে কোটিপতি হওয়া বর্তমান চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলামকে নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বিগত বছরগুলোতে মাঝে মধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অন্তত ৮/১০টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনেও রয়েছে অভিযোগ। যার তদন্ত এখনও চলছে।  

আবারও মনোনয়ন পাওয়ায় ১০ অক্টোবর এলাকায় বিশাল শোডাউন করেছেন তিনি। সেখানে নবীদুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে দলের কাছে পাহাড়সম অভিযোগ জমা পড়েছিল। তারপরও দল আমাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। এখন যারা নৌকার বিরোধীতা করবেন তারা আওয়ামী লীগবিরোধী হিসেবে গণ্য হবেন।  

রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসীতে বিএনপির নেতাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিতপত্র দেওয়া হয়েছে।

পাঙ্গাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, রফিকুল ইসলাম খান নান্নু নৌকা প্রতীক পাওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগে তার কোনো সদস্য পদও নেই। সে এখনও ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে রয়েছেন। মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে।  

ধুবিল ইউনিয়নে জামায়াত নেতার ছেলে মিজানুর রহমান রাসেল নৌকা প্রতীক পাওয়ায় দলের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।  

সলঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিপন হাসান জানান, মিজানুর রহমান রাসেলের বাবা প্রয়াত প্রফেসর আবুবকর তালুকদার ১৯৮৬ সালে জামায়াত ইসলাম থেকে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন তুলেছিলেন। তার চাচা ও শ্বশুরের পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার ভাই হিজবুত তাওহীদের সক্রিয় সদস্য।  

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম সরকার জানান, নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিতপত্র দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দলের স্বার্থে কেন্দ্রীয় কমিটি বিষয়টি বিবেচনা করবেন।   

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান রাসেল একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন দাবি করলেও তার সময়ের কমিটির কারো নাম বলতে পারেননি।

রায়গঞ্জের সোনাখাড়া ইউনিয়নের মনোনয়নপ্রাপ্ত বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপনের বিরুদ্ধে হতদরিদ্রদের ঘর দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে একাধিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে এবং তদন্তও চলছে।  

এসব বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কে এম হোসেন আলী হাসান জানান, দলের সিদ্বান্ত নেওয়ার মালিক নেত্রী। তিনি সব প্রার্থীর মনোনয়ন চুড়ান্ত করেছেন। আমরা চূড়ান্ত মনোনয়প্রাপ্তদের পক্ষেই কাজ করবো, এর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, প্রার্থী পুনর্বিবেচনার জন্য অনেকে আমাদের কাছে দরখাস্ত দিয়েছে। সেগুলো আমরা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। আবার অনেকে সরাসরি কেন্দ্রীয় কমিটিতে দরখাস্ত পাঠিয়েছে। এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।