ঢাকা: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না বলে আবারও মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, পরিষ্কার করে বলছি, আগে পদত্যাগ করুন, একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিন।
বৃহস্পতিবার(১৪অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের মানুষতো নির্বাচন ভুলেই গেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন আর নির্বাচন হয় না। সেই ২০০১ সালে নির্বাচন হয়েছে। তারপরে কী আর নির্বাচন হয়েছে? ২০০৮ সালে অবৈধ ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনের অধীনে যে নির্বাচন হয়েছে সেটা আমরা সম্পূর্ণভাবে কখনও মেনে নিতে পারিনি। ২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৮-তে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব এমনকি আর্মি দিয়ে আগের রাতেই ভোট কেটে নিয়ে গেছে। সেবার ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের আনসারের পোশাক পরিয়ে প্রত্যেকটা ভোট কেন্দ্রে পাহারা দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, আজ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন সাহেব বলেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনোভাবেই ইসির দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। সে কারণে পরিষ্কার করে বলছি, আগে পদত্যাগ করুন, একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিন, তারা নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেবে, নির্বাচন কীভাবে হবে সেটা ঠিক করবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু সেদিকে তারা যাবে না। তারা বলছে যা আছে তাই হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের কথা শুনলে মনে হয় আমাদের অস্তিত্বই নেই। এমন এমন কথা বলেন যে মনে হয় তারাই ইতিহাস তৈরি করেন। বুধবার একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, বিএনপি পালায়, আওয়ামী লীগ পালায় না। আওয়ামী লীগতো ১৯৭১সালেই পালিয়েছে। তারা ৭১সালে পাকিস্তানে পালিয়েছিল, বাকিরা সব ভারতে। আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান দেশে থেকে যুদ্ধ করেছেন। আমরা কখনও পালিয়ে যাবার দল নই।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আব্দুল মান্নানের বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন তিনি বলেছেন ‘আমাদের এত আয় যে ব্যয় করার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না’। তার সেই নিউজের পাশেই দেখলাম দুটো বাচ্চা থালা হাতে সাহায্য চাচ্ছে। অথচ তারা জায়গা খুঁজে পায় না। দুর্ভাগ্য আমাদের যে স্বাধীনতার ৫০বছর পর যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে তাদের এমন বক্তব্য শুনতে হয় ও পত্রিকায় দেখতে হয়।
সরকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন দুর্গাপূজায় কতগুলো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে কুমিল্লা ও চাঁদপুরে। চাঁদপুরে পুলিশ নির্বিচারে গুলি করেছে, গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। এই যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা, এটা এই সরকারের চক্রান্ত। তারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও স্থীতিশিলতা নষ্ট করতে চায়। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ রেখে দেওয়া হয়েছে। কে করেছে? যারা করেছে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্যই করেছে। দেশের স্থীতিশীলতা নষ্ট করার জন্যই করেছে। অন্যদিকে পুলিশ যে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে সেটাও একই কারণে করা হয়েছে। আমি বলতে চাই আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করি। এসব ঘটনা যারা ঘটায় তারা সরকারের এজেন্সির মাধ্যমে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য এবং আসল ঘটনাকে অন্যদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য ঘটায়। আমার দেশের এখন সংকট কি? সংকট হলো গণতন্ত্র, আমার কথা বলার অধিকার নাই। কোথাও দাড়াতে দেয় না। মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। একটা ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী দানবের মতো শাসন বসে আছে। সেটা নিয়ে আমরা কথা বলছি। সেই সময়ে এসমস্ত ঘটনা ঘটিয়ে জনগণের দৃষ্টিকে ডাইভার্ট করতে চায়।
খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা বিষয়ে তিনি বলেন, বুধবার ওনাকে দেখতে গিয়েছিলাম। চিকিৎসকরা বোর্ড বসিয়েছিলেন। তার যে অসুখগুলো তার সামগ্রিক যে চিকিৎসা সেটাকে মাল্টিডিসিপ্লিনারি ট্রিটমেন্ট বলা হয়। যেটা অ্যাডভান্স সেন্টারে করতে হবে। সেখানে ছাড়া এই ট্রিটমেন্ট সম্পূর্ণ হবে না। যে কারণে বার বার আমরা বলছি দেশনেত্রীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আপনারাতো তাকে সম্পূর্ণ প্রতিহিংসামূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে জোর করে আটকে রেখেছেন। আমরাতো দয়া চাই না, জামিনটা তার প্রাপ্য। এই মামলায় তিনি অবশ্যই জামিন পেতে পারেন। তাকে জামিন দিতে হবে এবং বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে হবে। এটা জনগণের দাবি, এই দাবি আদায় করতে হবে।
সমবায় দলের সভাপতি অধ্যক্ষ নূর আফরোজ জ্যোতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, ওলামা দলের আহ্বায়ক শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, সাবেক ছাত্রদল নেতা ইসহাক সরকার, সমবায় দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন, জিয়া নাগরিক ফোরামের সভাপতি মিয়া মো. আনোয়ার, সাতক্ষীরা জেলা সমবায় দলের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম, কৃষক দলের সাবেক সদস্য কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন, রমিজ উদ্দিন রুমী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২১
এমএইচ/এমজেড