লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী মাত্র ১০ বছরের ক্ষমতায় গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। তেল বিক্রেতা থেকে ১০/১৫ বছরে বনে গেছেন কোটিপতি।
জানা গেছে, উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মকছুল চৌধুরীর ছেলে মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী ছাত্র জীবনে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। কর্মজীবনের শুরুতে বাবার রেখে যাওয়া কৃষি জমিতে চাষাবাদের আয়ে চলত তার সংসার। তেমন কোনো পরিচিতি ছিল না নিজ এলাকায়। কর্মজীবনের শুরুতে মহিষখোচা বাজারে চৌধুরী বাজার রোডে খোলা বাজারে ডিজেল ও পেট্রোল বিক্রির দোকান করতেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবীব দুলু বাড়ি থেকে মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরীকে ডেকে নিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় করেন। একইসঙ্গে তিস্তা নদীর বাম তীরে সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এর জরুরি সংস্কার কাজ দেন তাকে। সেই প্রকল্পের টাকায় তিনি হঠাৎ ফুলে ফেঁপে ওঠেন বলে স্থানীয়দের দাবি।
তৎকালীন উপমন্ত্রী আসাদুল হাবীব দুলুর আর্শিবাদ পুষ্ট মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বিগত ২০০৬ সালে ইউপি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হলেও গত ২০১১ সালে মহিষখোচা ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর গত ২০১৪ সালের ২৫ জুন তিনি মহিষখোচা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক এবং গত ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর ওই ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনে মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী সভাপতি নির্বাচিত হন। বিএনপি নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্বও দেন তিনি। কিন্তু কোনোভাবে আওয়ামী লীগের পতন না হলে সরকারি দলের ভিড়তে চেষ্টা করেন তিনি।
সরকার দলীয় নেতা হতে গত ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনের কিছু দিন আগে বিএনপি ত্যাগ করে আওয়ামী লীগের যোগদান করেন মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী। নৌকা নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও আওয়ামী লীগে কোনো পদ-পদবি হয়নি তার। টানা দুই বার দুই ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান হয়ে ভাগ্য বদলে যায় তার।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর না নিলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের আস্থাভাজন হন মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী। সম্প্রতি তার মোবাইল নম্বরে মৃত ব্যক্তির বয়স্ক ভাতার টাকা চলে যাওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর কাছের লোক হয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বয়স্ক ভাতা নিজের মোবাইলে নেওয়ায় সংক্ষুব্ধ হন মন্ত্রী নিজেও। ফলে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হলেও মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী আসন্ন নির্বাচনের নৌকার টিকিট পেতে দূরত্বের অবসান ঘটিয়ে ফেলেন। পেয়ে যান নৌকার মনোনায়ন। ১১ নভেম্বরের ভোটে পুনরায় জয়লাভ করতে নৌকার মাঝি হিসেবে প্রচারণা শুরু করেছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, ক্ষমতাসীন দুই দলের নেতা হিসেবে দুই বারের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী মাত্র ১০ বছরে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। পাড়া গাঁয়ে করেছেন আলিসান দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট বাড়ি। সেই বাড়ি সাজিয়েছেন দামি দামি আসবাবপত্রে। তিনি ঘুরে বেড়ান প্রায় ২৪ লাখ টাকা দামের গাড়িতে। এলাকায় কিনেছেন অনেক কৃষি জমি, করেছেন বড় বড় গোডাউন, আদিতমারীর বৈরাগীর ভিটা এলাকার ইটভাটায় শেয়ার, রংপুর শহরের মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে ও শহরের বিভিন্ন স্থানে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার জমি।
তার বাবা প্রায়ত চেয়ারম্যান মকছুল চৌধুরীর সময় ইউনিয়ন পরিষদের অর্থে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলতে মহিষখোচা বাজারে জমি কেনা হয়। তৎকালীন নিয়মানুযায়ী জমিটি ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে মকছুল চৌধুরীর নামে রেজিস্ট্রি করে দেন প্রায়ত ধরনী কান্ত ও তরনী কান্ত । জমিটির বিক্রেতার ছেলে কোকিলেশ্বর ও স্থানীয়রা এমনটি দাবি করেন, পরে জটিলতায় ওই জমিতে স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। ফলে জমির মালিক হয়ে যান তৎকালীন চেয়ারম্যান মকছুল হোসেন চৌধুরী। বাবার রেখে যাওয়া সেই জমিতে চৌধুরী কমপ্লেক্স নামে দ্বিতল মার্কেট গড়ে তুলেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী।
অর্ধ কোটি টাকায় কুষ্টারীর হাটে ভাইয়ের নামে ইজারা নিয়ে কামারপাড়া এলাকার নিজের জমিতে বসিয়েছেন গরুর হাট। সেখানেও রয়েছে বিশাল বড় গোডাউন। উপজেলা সদরের রথের পাড় এলাকায় অটোরাইস মিল গড়ার প্রস্তুতিও চূড়ান্ত। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে ব্যাংক ব্যালেন্স। ঢাকা শহরে প্লট কিনেছেন বলেও এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে। সব মিলে মাত্র ১০/১৫ বছরেই মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
মহিষখোচা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মুরাদ বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মোসাদ্দেক চৌধুরীর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভেঙে দেওয়ার চক্রান্তও করেছিলেন। অবৈধ সম্পদ রক্ষায় ও ক্ষমতাসীন দলে থাকতে দল বদল করেছেন। আওয়ামী লীগকে ভালোবেসে আসেননি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তার সরব উপস্থিতি ছিল না। বিএনপির লোকজনের সঙ্গে আজও আঁতাত করে চলছেন তিনি।
>>> ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতিও নৌকা প্রত্যাশী!
বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২১
এসআই