ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা ক্ষমতাসীনদের মদদ ছাড়া সম্ভব নয়। এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য বিভিন্ন রকমের অপকৌশল গ্রহণ করতে শুরু করেছে, এটা তারই একটা প্রমাণ।
সোমবার (১৮ অক্টোবর) দিনগত রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে আজকে অনেকে উপস্থিত আছেন যারা ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। সেখানে নিঃসন্দেহে যারা আক্রমণ চালিয়েছে তারা কোনো বিরোধীদলের রাজনৈতিক নেতাকর্মী নয়। এটা আজকে সব জায়গা প্রমাণিত হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি সবসময় সব ধর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং সেটা তারা প্রমাণ করেছে। আপনারা জানেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রমনার রেসকোর্সের কালিমন্দির ভেঙে দিয়েছিল। ৭১ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল তখন সেটাকে বুলডোজার দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। আমাদের সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার নির্দেশে রমনা কালিমন্দির পুনঃনির্মাণ শুরু করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, যখনই ঘটনা ঘটেছে তখনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব আঙুল তোলেন বিএনপি নাকি ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কোনো তদন্ত না করেই এসব কথা বলছেন। প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের জড়িত করে মামলা করা হয়েছে, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নোয়াখালীর চৌহমুনীতে ৯০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা নির্বাচন করতে পারে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটা জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এটার উদ্দেশ্যটা কী? প্রধান যে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবার জন্য অতীতে যে অস্ত্রটা ব্যবহার করা হয়েছে। নির্বাচনের সময়ে গায়েবি মামলা দিয়েছে, তার আগে নাশকতার মামলা দিয়েছে, তারও আগে বিস্ফোরক মামলা দিয়েছে। আমাদের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এখানে আমরা যারা বসে আছি কেউ নেই যে যার বিরুদ্ধে ১০/২০/৬০/১০০ টা মামলা নেই।
শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপির উদ্যোগে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের নিচতলায় এ শুভেচ্ছা অনুষ্ঠান হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে শারদীয় শুভেচ্ছা জানান।
সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, জয়দেবপুর, লক্ষ্মীপুর, নওগাঁ, কিশোরগঞ্জ, নড়াইল, ময়মনসিংহ, বরিশাল, জামালপুর প্রভৃতি জেলা থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট ও ছাত্র যুব ফ্রন্টের দেড় শতাধিক সদস্য এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সূচনাতে কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের পূজামণ্ডপ ও রংপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, গত ১৩ তারিখ কুমিল্লার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বললেন, আমরা সজাগ আছি। ২০ জেলায় বিজিবি নামানো হয়েছে। এরপর অষ্টমী, নবমী হলো আপনারা পূজামণ্ডপে বিজিবি দেখেছেন কী? এরা (সরকার) মিথ্যাচার করছে, ধোকা দিচ্ছে। এরা আমাদের ঘাড়ের ওপর চেপে বসে আছে, এদের তাড়াতে হবে। এজন্য আজকে এদিনে আমাদের অঙ্গীকার হউক আন্দোলনের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো।
বিএনপি নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও অমলেন্দু দাস অপুর সঞ্চালনায় মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ড, অপর্না রায় দাস, জন গমেজ, অশোক কুণ্ড, সুশীল বড়ুয়া, রমেশ দত্ত, কামাক্ষা চন্দ্র দাস, সঞ্চয় দে রিপন, সৌরভ পাল, মিল্টন বৌদ্দ, জয়দেব জয়, বিশ্বজিত ভদ্র, বিশ্বজিত ভদ্র, সীমান্ত দাস, সঞ্চয় গুপ্ত, পলাশ মণ্ডল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২১
এমএইচ/আরবি