ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘ব্যক্তিগত রেষারেষিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২১
‘ব্যক্তিগত রেষারেষিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি’ মির্জা আব্বাস

ঢাকা: ব্যক্তিগত রেষারেষিতে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, কমিটি করেন, যাই করেন করবেন, নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কিছু করবেন না। দলটাকে রক্ষা করেন, দলটাকে বাঁচান।

শুক্রবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ আয়োজনে স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সাদেক হোসেনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয় বলতে গিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের মধ্যে তো কোনো ঝামেলা হয়নি। এখন আপনারা দেখি বিএনপির স্লোগান তো নাই-ই, একটা দলের নাম বলেন, আর উত্তর-দক্ষিণ, উত্তর-দক্ষিণ। এই যে বিষয়টা এখান থেকে আপনাদের শিক্ষণীয় আছে।  

তিনি বলেন, এখন যারা আমাদের সংগঠন করছেন, দেখলাম বিভিন্ন গ্রুপ করা হয়েছে। ওখানে গিয়ে যেটা আপনারা করছেন, কাজটা ভালো না। অর্থাৎ নিজের পছন্দের লোকগুলোকে আগে নিয়ে আসছেন। যুবদল হোক, ছাত্রদল হোক, স্বেচ্ছাসেবক দল হোক। সমস্ত অঙ্গসংগঠন। মানে সংগঠনটাকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।  

মির্জা আব্বাস বলেন, খোকার সময়, আমার সময় কখনও এই কাজটি করি নাই। যতকিছু থাকুক, আমাদের সম্পর্কে যে যা বলুক, কিন্তু সংগঠন ধ্বংস করার কাজটা আমরা হাতে নেই নাই। এখন দায়িত্ব পাওয়ার পরই, কয়েকদিন আগে একটা কমিটি দেখলাম, একটা দলের। আমার দুঃখ লাগে যাদের কোনো অবদান নাই তাদের ওপরে এনে দেওয়া হয়েছে। আর যাদের অবদান আছে তারা নিচে চলে গেছে। কারণ কি জানেন? ব্যক্তিগত রেষারেষির ফল। এই ব্যক্তিগত রেষারেষির ফলে আমাদের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিষ্কার ভাষায় এ কথাটি বলতে চাই, দলে যদি আমরা সুসংগঠিত হতে না পারি, তাহলে কিন্তু আমরা বরাবরের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবো চিরতরে।

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, সাদেক হোসেন খোকা ও আমার মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে সারা দেশে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। তবে এটা আপনাদের মধ্যে থাকলেও আমাদের মধ্যে ছিল না। যারা এখন রাজনীতি করছেন, বিশেষ করে আমার ছোট ভাইদের বলব, আমার এবং খোকার মাঝ থেকে আপনাদের কিছু বোঝার বিষয় আছে। অনেকে বললেও আমি কখনও ঢাকা মহানগরের সভাপতি ছিলাম না। কিছুদিন আহ্বায়ক ছিলাম। কিন্তু এই ঢাকা মহানগরীতে আমার বিচরণ ছিল সর্বত্র। যখন শওকত আলী, মির্জা গোলাম হাফিজ সভাপতি তখনও ছিলাম, সাদেক হোসেন খোকা যখন সভাপতি তখনও ছিলাম। আমাদের কাজে কোনো অসুবিধা হয়নি। অনেকে সুযোগ নিতো, যেমন একগ্রুপ লোক ছিল, আমি যখন  মন্ত্রণালয়ে আমার অফিসে খাওয়া-দাওয়া করতাম, তখন আমার সাথে কয়েকজন খেত। তারা আবার আমার এখানে খাওয়া-দাওয়া করে সাদেক হোসেন খোকার ওখানে গিয়ে কুলি ফেলত। আবার খোকার ওখানে খেয়ে আমার এখানে কুলি ফেলত। তারা খোকার ওখানে গিয়ে আমার বদনাম, আবার আমার এখানে এসে খোকার বদনাম। অর্থাৎ তারা নিজেদের প্রয়োজনে আমাদের দুজনকে ব্যবহার করত। কিন্তু খোকার সঙ্গে আমার রেগুলার কথা হতো, এগুলোকে আমরা প্রশ্রয় দিতাম না।

তিনি বলেন, যে দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য আমি যুদ্ধ করলাম, সাদেক হোসেন খোকা যুদ্ধ করল, সেই দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মিছিল, সভা করলাম। অথচ এই নির্লজ্জ সরকার ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়িয়ে দিল। অন্যদিকে ভারতে তেলের দাম কমে গেল, বিষয়টা বুঝতে পারছেন? একটা লুটেরা সরকার, বাটপার সরকারের জন্য আমি কিংবা সাদেক হোসেন খোকা ‍যুদ্ধ করি নাই। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম একটা স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশ অর্জনের জন্য। আজকে আমার ভয় হচ্ছে, আমরা কোথায় চলে যাচ্ছি, দেশটা কি স্বাধীন থাকবে? নাকি ওই হায়দ্রাবাদ, সিকিমের মতো আমাদের অবস্থা হয়ে যাবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২১
এমএইচ/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।