ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

নির্বাচনের আগে দলে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কঠোর আ.লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২১
নির্বাচনের আগে দলে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কঠোর আ.লীগ

ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মধ্যে কঠোর শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহীদের পাশাপাশি যারা তাদের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিযেছে দলটি।

কয়েক ধাপে অনুষ্ঠিত চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রতিটি ধাপে আওয়ামী লীগ থেকে কয়েশ জন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং হচ্ছেন। দলের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের লোকজনই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং অনেকেই বিদ্রোহীদের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আওয়ামী লীগই মাঠে নেমেছে। এমনকি নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সহিংসতায়ও জড়াচ্ছে। এতে প্রায় অর্ধশত মানুষ নিহত ও কয়েক শ’ আহত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে শুধু বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়াই শেষ কথা নয়, এটা দলের সিদ্ধান্তকে চ্যলেঞ্জ করা। আবার এদেরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে তারাও একই কাজ করছে। এতে দলীয় শৃঙ্খলার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে দলের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। তাই বিদ্রোহী প্রার্থীর পাশাপাশি যারা তাদের পেছনে রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রত্যেক বিদ্রোহী প্রার্থীর পৃষ্ঠপোষকদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত যে পদেই থাকুক তাদেরকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি এরা ভবিষ্যতে দলের আর কোনো পদে যেতে পারবেন না এবং নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন না।

তারা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মধ্যে একটা শক্ত শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষযগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত হয়েছে।  

শুধু তাই নয়, দলের শৃঙ্খলা বিরোধী এবং দলের ইমেজ নষ্ট করে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে কেউ জড়িত হলে তার বিষয়েও কঠোর অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের যে পর্যায়ের নেতাই হোক তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার এ কঠোর অবস্থানেরই একটা বড় বার্তা বলে দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন। একটা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র হওয়া সত্বেও তাকে ক্ষমা করা হয়নি। তিনি দলের অনেক প্রভাবশালী নেতাদের স্নেহধন্য ছিলেন এবং সহযোগিতা পেয়েছেন। তারপরও দলে শৃঙ্খলার বিষয়টাকেই আগে দেখা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও ওই নীতিনির্ধারকরা জানান।  

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক ওবায়দুল কাদেরও দলের এই কঠোর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। কার্যনির্বাহী সংসদের সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্রোহীদের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত ছিল সেটাতো থাকবেই, কিন্তু বিদ্রোহীদের যারা মদদ দিয়েছেন তারা নেতা হলে, হয়তো জেলার নেতা, উপজেলার নেতা তাদেরকেও কিন্তু শাস্তি পেতে হবে। এমনকি জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রী, এমপি হলেও প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌাধুরী বাংলানিউজকে বলেন, কারো কারো ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে। আওয়ামী লীগ একটি উদার গণতান্ত্রিক দল। তার মানে এই না, যে যা খুশি করে যাবে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য, শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ড তো আওয়ামী লীগ মেনে নেবে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পদাক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গেলে কেউই ছাড় পাবেন না। পদধারী নেতা যারা বিদ্রোহীদের মদদ দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মধ্যে আরও শক্ত শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় এই কঠোর অবস্থান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২১
এসকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।