ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

খালেদাকে বিদেশ না পাঠালে সরকার পতনের আন্দোলন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২১
খালেদাকে বিদেশ না পাঠালে সরকার পতনের আন্দোলন

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দ্রুত বিদেশে পাঠানো না হলে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলীয় নেতারা।

শনিবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে গণঅনশনের কর্মসূচির সমাপনী বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতারা এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকারকে খুব পরিষ্কার ভাষায় আমরা এ গণঅনশন থেকে বলে দিতে চাই যে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। তা না হলে এবার যে আন্দোলন শুরু হলো গণঅনশনের মধ্য দিয়ে সেই আন্দোলন আপনাকে গদিচ্যুত করবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আগামী ২২ নভেম্বর দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিৎসা করার দাবিতে এবং একইসঙ্গে তার মুক্তি দেওয়ার দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও সারাদেশে মহানগর-জেলা-উপজেলাগুলোতে সমাবেশ হবে। এ সমাবেশে আমরা আবারও এ দাবি নিয়ে সামনে আসবো। তারপরে যদি না হয়, আমরা আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করবো।

বিদেশি ডাক্তাররা বলেছেন, দেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা অসম্ভব উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি আজকে এত অসুস্থ যে, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছেন। আমরা ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছি বার বার, বিদেশে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছেন, দেশনেত্রীর বাংলাদেশে চিকিৎসা দেওয়া অসম্ভব। তার যেসব জটিলতা আছে সেই জটিলতাগুলো বিদেশে আরও অ্যাডভান্স সেন্টারে টিট্রমেন্ট দেওয়া না হলে তাকে সুস্থ করা যাবে না। তার (খালেদা জিয়া) পরিবার থেকে আবেদন জানানো হয়েছিল তাকে বিদেশে ট্রিটমেন্ট করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। তারা সেই সুযোগ দেয়নি। উপরন্তু পার্লামেন্টে সংসদ নেত্রী এমন ভাষায় কথা বলেছেন যে ভাষা কোনো মতে গ্রহণযোগ্য নয়।

আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, মিথ্যাচার করেছেন আইনমন্ত্রী। ৪০১ ধারায় এ সরকারের সম্পূর্ণ অধিকার আছে এবং এটা তাদের দায়িত্ব। যে কোনো নির্দেশে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা আমাদের জীবন-মরণের সমস্যা, আমাদের অধিকারের সমস্যা। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এদেশের মাটির সঙ্গে একেবারে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছেন। মা ও মাটি বলতে আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বুঝি। নেত্রীকে অবশ্যই আমাদের মুক্ত করতে হবে। সেজন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত আছি।

এভারকেয়ার হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপির উদ্যোগে সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ গণঅনশনের কর্মসূচি হয়। কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁ থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের এক দিকের ফুটপাতে মাদুর বিছিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষজন এ গণঅনশনে অংশ নেয়।
 
আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা হাঙ্গার স্টাইকের মাধ্যমে বলছি, দেশনেত্রীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি যদি অনতিবিলম্বে পূরণ না হয়, তাহলে দেশের জনগণের যে দাবি এ দাবি পুরণের জন্য সরকার পতনের আন্দোলনে আমাদের আগামী দিনে অগ্রসর হতে হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমের পরিচালনায় গণঅনশনে বিএনপির আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আবদুল্লাহ আল নোমান, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, মাহবুব উদ্দিন খোকন, আসাদুজ্জামান রিপন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শ্যামা ওবায়েদ, এবিএম মোশাররফ হোসেন, শিরিন সুলতানা, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিমউদ্দিন আলম, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, তাবিথ আউয়াল, হায়দার আলী লেলিন, আকরামুল হাসান, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, অঙ্গ সংগঠনের আফরোজা আব্বাস, সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু,  মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, সুলতানা আহমেদ, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, হেলাল খান, সাদেক আহমেদ খান, আবুল কালাম আজাদ, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

গণঅনশনের কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, এলডিপির ড. রেদোয়ান আহমেদ, আবদুল করীম আব্বাসী, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের  অ্যাডভোকেট এমএ রকিব, অধ্যাপক আব্দুল করীম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, এনডিপির আবু তাহের, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতা  অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের শওকত মাহমুদ, শত নাগরিকের আবদুল হাই শিকদার, বিশ্ববিদ্যালয়র সাদা দলের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফুর রহমান, এ্যাবের প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ড্যাবের অধ্যাপক আব্দুস সালাম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান প্রমুখ নেতারা একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।

গণঅনশনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, চেয়াপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক সাহিদা রফিক, তাহমিনা রুশদীর লুনা, শাহজাদা মিয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

গণঅনশন উপলক্ষে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশসহ সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। কাছাকাছি স্থানে ছিল পুলিশের সাজোয়া যান, জলকামানের গাড়ি, প্রিজন ভ্যান। তবে এ গণঅনশন কর্মসূচিতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। প্রায় সাত ঘণ্টার এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২১
এমএইচ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।