ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘আজকে আইনের যারা ব্যাখ্যা দেয় তারা বেআইনিভাবে সরকারে আছে। বাংলাদেশের সংবিধানমতে এই সরকারের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই।
সোমবার (২২ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ’ এদেশের জনগণ বলে আপনাদেরও ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। কারণ আপনারা জনগণের ভোটে আসেননি। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছেন, গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছেন। তাই আপনাদের মুখে আইনের ভাষা বেমানান। বেআইনিভাবে ক্ষমতায় আছেন। সুতরাং আমরা বলবো ন্যায়ের পথে চলেন আর আইনের পথে চলেন, খালেদা জিয়াকে নিশর্ত মুক্তি দিয়ে প্রমাণ করুন, খালেদা জিয়ার প্রতি আপনাদের কোনো হিংসাবিদ্বেষ নেই। তা নাহলে খালেদা জিয়ার অনুসারীরা জীবন এবং রক্ত দিতে অভ্যস্ত। জেল-জুলুম হুলিয়ার পরোয় বাংলাদেশের জনগণ করে না, আমরাও করি না। সে কারণে সহজভাবে আবার বলছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন, তাতে যত বিলম্ব করবেন বিড়ম্বনা তত বাড়বে। জনগণের মুখ বন্ধ রাখতে পারবেন না। রাজনীতির গতিতে সহজভাবে চলতে দিন।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের নেত্রীর নিশর্ত মুক্তি চাই, তার চিকিৎসা চাই। তিনি মুক্তি পেলেই তাকে চিকিৎসা করাতে পারবো। এই চিকিৎসায় বাধা সরকারের অনৈতিক, সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের প্রকাশ। চিকিৎসায় বাধা দেওয়া অর্থ খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মারার চক্রান্ত। এই চক্রান্ত রোখার জন্য আমরা আন্দোলন করবো।
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, একজন ৭৭ বছর বয়সী নারী, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষ তিনি অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় আছেন। চিকিৎসকরা বলছেন তার চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়।
আইনজীবীরাও বলছেন তাকে বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর কোনো বাধা নেই। শুধু আইনমন্ত্রী বলছেন পারা যায় না। যিনি চাকরির মায়া বেশি করেন, তার কাছে আইনের কোনো গুরুত্ব নেই। তার চোখের সামনে দিয়ে ফাঁসির আসামি মুক্ত হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামিরা মুক্ত হয়ে যায়। তখন ওনার আইনের কোনো সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাতে।
তিনি বলেন, কথা আজকে একটাই, খালেদা জিয়া শুধু আমাদের নেত্রী নন, তিনি আমাদের মা'। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ তাকে মায়ের মতো শ্রদ্ধা করে। কাজেই তার জন্য যেকোনো দায়িত্ব নিতে আমরা রাজি আছি। মনে রাখবেন আমাদের সেই ক্ষমতা আছে। একটা চিকন সুতা যে কেউ ছিড়ে ফেলতে পারে। কিন্তু যখন হাজার হাজার সুতা যুক্ত হয়, তখন সেটা দড়ি হয়ে যায়, সেই দড়ি ছেঁড়া যায় না। বরং দড়ি দিয়ে অন্যকে বাধা যায়। আমাদের কেউ ছিড়তে পারবে না। আমরা এর আগে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। গণতন্ত্র কায়েম করেছি। এক এগারোর সময় সরকারকে বাধ্য করেছি নির্বাচন দিতে। কাজেই আমরাই পারবো ইনশাল্লাহ। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে এবং তাকে মুক্ত করতে ইনশাল্লাহ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভূইয়া, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আব্দুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান শামীম, মীর নেওয়াজ আলী, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন প্রমুখ।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে গত ২০ নভেম্বর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে দিনব্যাপী গণঅনশন শেষে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সমাবেশের ডাক দেন। একইসঙ্গে সারা দেশে জেলা ও মহানগরে এ কর্মসূচি পালন করছে দলটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২১
এমএইচ/এএটি