লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১নং উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান এমরান হোসেন নান্নুকে আবারও মনোনয়ন দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
তাদের দাবি, এমরান হোসেন নান্নু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার আগে দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন এমরান হোসেন নান্নু। নান্নুর নামের পাশে ব্রাকেটে বীরমুক্তিযোদ্ধার সন্তান লিখে দেওয়ার কারণে ক্ষুব্ধ ও হতাশ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা।
হামছাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ২১ নভেম্বর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর সদরের উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি ও চেয়ারম্যান এমরান হোসেন নান্নুর পিতা রশিদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। এটা দিবালোকের মত সত্য। এখন প্রশ্ন, নান্নুকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে দেখিয়ে যারা জঘন্য মিথ্যাচার করেছেন তারা দায়িত্ব এড়াবেন কী করে? উনি নিজেও দলীয় ফরমে এই মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এরূপ একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শকাতর বিষয়ে মিথ্যা তথ্য প্রদানের জন্য তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তিনি আরও বলেন, নান্নুর ছোট ভাই বিদেশে বিএনপি করেন। বড় ভাই বিনু বঙ্গবন্ধুর স্মরণ সভা উপলক্ষে আয়োজিত গণভোজের হাঁড়িতে লাথি দেন। তার এ জঘন্য আচরণ পুরো বাঙালি জাতিকে অপমানিত করে। অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হয়নি বরং উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে জায়গা দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করা হয়। এতে আমরা মর্মাহত।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নান্নু চেয়ারম্যানের আয়ের বড় উৎস। কোটি কোটি টাকার দেশি বিদেশি সহযোগিতা এলেও নান্নু চেয়ারম্যান সিকিভাগ কাজও করেননি। বিপুল অংকের টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। বয়স্ক ভাতা বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য জনপ্রতি ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় আদায় করেন।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল মোল্লা বলেন, নান্নু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার পরিবারের সদস্যরা বিএনপির সঙ্গে জড়িত। ২০০৪ সালে নান্নুর বড় ভাই বিনু, চৌধুরী বাজারে প্রকাশ্যে দিবালোকে অজস্র মানুষের সামনে বঙ্গবন্ধুর স্মরণসভা উপলক্ষে আয়োজিত গণভোজের হাঁড়িতে লাথি মারেন। তার ঘৃণ্য কর্ম আজও মানুষের মুখে মুখে। বিনু শাস্তি পাননি বরং দলীয় পদপদবী নিয়ে বহাল তবিয়তেই আছেন। এতে উপেক্ষিত আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। আমি নিজেও নান্নু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছি।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ কাদের সিদ্দিকী বলেন, নান্নুর পুরো পরিবার বিএনপি। তারা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তাদের কারণে দুর্দিনের আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা এখন অবহেলিত। তার ভাই বিনু ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট চৌধুরী বাজারে বঙ্গবন্ধুর স্মরণসভা উপলক্ষে আয়োজিত গণভোজের হাঁড়িতে লাথি মারে। নান্নুকে সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার করে নতুন কমিটি দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে বেশ কয়েকবার।
নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করেও এ পরিবারটি আওয়ামী লীগের কাঁধে সওয়ার হয়েছে। এসব হাইব্রিড আওয়ামী লীগদের নিয়ে উদ্বিগ্ন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। দলে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতারা কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বললেও এসব হাইব্রিড আওয়ামী লীগারের ব্যাপারে উদাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। এমরান হোসেন নান্নুকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পদকে অবৈধ দাবি করে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মৌখিকভাবে একাধিকবার আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি। পরে সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। নান্নু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির বহু অভিযোগ রয়েছে বলে কাদের সিদ্দীকিও জানান।
এ ব্যাপারে ১ নং উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমরান হোসেন নান্নু বলেন, আমার পরিবারে অনেক আওয়ামী লীগ আছে। আমার মামা আওয়ামী লীগার ছিলেন। তিনি বঙ্গন্ধুর সঙ্গে কারাবরণ করেন। আমার পরিবারে কোনো বিএনপি নেই। আমার বড় ভাই সৌরভ হোসেন বিনুর বিরুদ্ধে ১৫ আগস্ট গণভোজের হাঁড়িতে লাথি মারার অভিযোগ বানোয়াট। আমার ভাই ছাত্রলীগ করতেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২১
নিউজ ডেস্ক