ঢাকা: ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল, আজকে সেই চেহারার থেকে খুব একটা পার্থক্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে একইভাবে আমরা দেখছি তরুণ-যুবকদের হত্যা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেড়শ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে সত্য কথা বলার জন্য। সাড়ে চার হাজার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি আমাদের অধ্যাপক যারা আছেন তাদের অনেককেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। আমাদের অনেক ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে। আজকের এই সরকার যারা স্বাধীনতার কথা বলে, আমাদের দেশের মানুষের ওপর স্টিম রোলার চালাচ্ছে। তারা কোনো মতেই ১৯৭১ সালের হানাদার বাহিনীর চেয়ে কোনো মতেই শ্রেষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছরে যখন আমাদের স্বাধীনতা সুসংহত হওয়ার কথা, স্বার্বভৌমত্বকে সুসংহত করার কথা, অর্থনীতিকে উপরে নিয়ে যাওয়ার কথা তখন এমন একটি সরকার, যারা এখন বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। যাদের জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তারা জনগণের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের সমস্ত সম্মানকে ক্ষুন্ন করেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, কয়েকদিন আগে আপনারা দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একটা আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করেছে এবং তাদের সাতজন কর্মকর্তাকে আমেরিকাতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কারণটা কী, তারা খুব পরিষ্কার করে বলেছে, এরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষকে তারা অন্যায়ভাবে খুন করেছে, অত্যাচার নির্যাতন করেছে। বিনাবিচারে হত্যা করেছে, এক্সট্রা জুডিসিয়াল কিলিং করেছে। বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছে, প্রায় ছয়শোর ওপরে মানুষকে গুম করে ফেলেছে। হাজারের ওপর মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আজকে আবার দেখলাম তাদের পক্ষে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীরা সাফাই গাচ্ছে। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা কিন্তু হয়ে গেল। বাংলাদেশ চিহ্নিত হয়ে গেলো, বিশ্বের দরবারে, যে বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়। যেখানে মানুষের স্বাধীনতা থাকে না, যেখানে সরকার নিজেরাই আইন ভঙ্গ করে। জনগণের অধিকারকে হরণ করে নেয়। আজকে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। অর্থনীতিকে পঙ্গু করে ফেলে লুটপাটের অর্থনীতি চালু করেছে। আমরা দেখছি এখানে মুষ্টিমেয় মানুষ যারা শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থনপুষ্ট, তারাই ধনী হচ্ছেন। আর সাধারণ মানুষ গরিব থেকে আরও গরিব হয়ে যাচ্ছে, দারিদ্র্যের সীমা আরও নিচে নেমে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের যে নেত্রী স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরু থেকে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধ করলেন, যিনি পুরো সময়টা পাক হানাদার বাহিনীর কারাগারে বন্দি ছিলেন, তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে, তাদের হাত ধরে চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছিলেন কখন, যখন তার স্বামী জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করে গোটা জাতিকে স্বাধীনতাযুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান বাহিনীর কারাগারে ছিলেন। তাকে আজকে চিকিৎসার কোনো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তার জীবননাশের ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, ঢাবির সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আব্দুল লতিফ মাসুম, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
এমএইচ/এমজেএফ