ঢাকা: প্রয়াত সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রিয়াজ ভাইয়ের চলে যাওয়া আমাদের সবার জন্যই বেদনার, কষ্টের। উনি সেই সাংবাদিক যিনি গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দিয়ে, তার মেধা দিয়ে সাংবাদিকতাকে সব সময় সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন।
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জানাজার আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের টেনিস কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রয়াত রিয়াজউদ্দিন আহমেদের কফিনে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরীর পরিচালনায় জানাজার সময় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রয়াত রিয়াজউদ্দিনের ভাই অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল জয়নাল আবেদীন ও মরহুমের একমাত্র ছেলে মাশরুর রিয়াজ উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি মনে করি, এ সময়ে যখন গণতন্ত্রের একটা সংকট চলছে তখন তার মতো সাংবাদিকের খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে তার একটা বড় শূন্যতা অনুভব করছি। তার বিদেহী আত্মার আমি শান্তি কামনা করছি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তার এ মৃত্যু অভাবনীয় ক্ষতি হয়েছে সাংবাদিকতার পেশায়। পৃথিবীতে শূন্যতা থাকে না। হয়তো উনাকে হারানো যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা এখনই পূরণ হবে না। তবে উনার ভালো গুণগুলো আমাদের সবার স্মরণ রাখা দরকার। সাহস, দেশপ্রেম, বস্তুনিষ্ঠতা, সাংবাদিক শ্রেণির জন্য তার দরদ-অবদানকে আমাদের স্মরণে রাখতে হবে।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, আমি রিয়াজ ভাইয়ের পরোলোকগমনে অত্যন্ত মর্মাহত, ব্যথিত। আমি উনাকে খুব মনে-প্রাণে শ্রদ্ধা করতাম। উনি আমাদের সম্পাদক পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। উনার সঙ্গে অনেক সাংবাদিকদের অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা-সংগ্রাম, সাংবাদিকদের একটা সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি আন্দোলন, অনেক আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সঙ্গে আমার থাকবার সুভাগ্য হয়েছিল। আমি উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। উনাকে আল্লাহ যেন বেহেস্তবাসী করেন।
নিউজ পেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, রিয়াজ ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের তবে ঘনিষ্টতা খুব বেশি দিনের না। যেভাবে আমি দেখেছি একজন পেশাদারী সাংবাদিক হিসেবে যতগুলো গুণ থাকা দরকার আন্তর্জাতিক লেভেলে এবং দেশীয় লেভেলে প্রত্যেকটা গুণে তিনি গুণান্বিত ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে তিনি নোয়াবের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এ কে আজাদ বলেন, সাংবাদিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে যখনই কোনো কিছু আমাদের কাছে আসতো তখনই আমরা রিয়াজ ভাইকে দায়িত্ব দিতাম নোয়াবের সঙ্গে সাংবাদিকদের একটা সমন্বয় করার জন্য এবং তাকে এটাও বলতাম আপনি কিন্তু সাংবাদিকদের পক্ষ নিয়েন না, আপনি নিরপেক্ষ থাইকেন। উনি কিন্তু নিরপেক্ষভাবে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি বলবো, রিয়াজ ভাইয়ের জীবনের যে উল্লেখযোগ্য অবদান এ প্রেসক্লাবের জন্য, সাংবাদিকদের জন্য, সাংবাদিক ইউনিয়নের জন্য, নতুন প্রজন্ম যেন তার জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি যে, রিয়াজ ভাইয়ের আদর্শকে যেন আমরা ধারণ করতে পারি। তিনি আমাদের মধ্যে চিরদিন বেঁচে থাকবেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শওকত মাহমুদ বলেন, রিয়াজ ভাই তার সাংবাদিকতার চৈতন্যবোধ দিয়ে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে যখন তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন তখন আমিও তার সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমি লক্ষ্য করেছি যে, সাংবাদিকতার প্রতি তার যে মমত্ববোধ, সাংবাদিকতার প্রতি তার যে দায়িত্ববোধ, সর্বোপরি গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার জন্য তার যে ভূমিকা তিনি তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে গেছেন। আজকে আমরা অভিভাবক শূন্য হয়ে গেছি। তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে এমন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন- সাংবাদিকদের অধিকার, জনগণের অধিকার এসব মিলিয়ে সাংবাদিকতার পেশার প্রতি তার দায়িত্ববোধে এমন এক ভূমিকা পালন করেছেন যে, তিনি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আমরা প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসিব করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, রিয়াজ ভাই একজন ভালো সংগঠক ছিলেন, ভালো অভিভাবক ছিলেন। পেশার প্রতি তার যে আত্মনিবেদন তার কোনো তুলনা নেই। সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে কখনো তিনি আপস করেননি। সাংবাদিক-কর্মচারীর স্বার্থের প্রতি তিনি সব সময়ে অবিচল ছিলেন। একটা বিষয় স্পষ্ট যে, মতানৈক্য কখনোই মানুষের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে না এটা আমরা রিয়াজ ভাইয়ের কাছে থেকে শিখেছি। মতানৈক্য থাকতেই পারে কিন্তু সেখানে দূরত্ব নেই। সেই মতানৈক্য গ্রহণ করা, মতানৈক্য নিয়ে আলোচনা করার মানসিকতায় তিনি আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন সারাজীবন। তার এ চলে যাওয়া আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, রিয়াজ ভাই ছিলেন আমাদের অভিভাবক, শুধু অভিভাবক বললে ভুল হবে আমাদের অভিভাবকের ওপরে যদি কিছু থাকে আমাদের অত্যন্ত প্রিয়জন রিয়াজ ভাইকে নিস্তব্ধ, নিথর রেখে আজকে আমরা কথা বলছি এটা কয়েকদিন আগেও ভাবতে পারিনি। কয়েকদিন আগেও উনি এসে রিপোর্টার্স ইউনিটির নির্বাচন পরিচালনা করেছেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। আমরা এমন একজনকে হারিয়েছি যে আমাদের যে কোনো সংকটে আমরা যার সঙ্গে যোগাযোগ করতাম, তিনি আমাদের পরামর্শ দিতেন আমরা তেমন একজনকে হারিয়েছি। সাংবাদিক সমাজ যেমন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, জাতীয় প্রেসক্লাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আমরা যারা কমিটিতে আছি, ক্লাব পরিচালনা করি, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তার সম্পর্কে কেউ কোনো নেতিবাচক কথা আমি বিশ্বাস করি জেনেছি, দেখেছি যে, কারো পক্ষে বলা সম্ভব নয়। উনি এত অমায়িক, এত ভদ্র এবং সাংবাদিকতার আমরা যেটাকে বলি বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার স্বাধীনতা এসব বিষয়গুলোতে উনি যতটা মনোযোগ দিতেন সেগুলো আমরা দারুণভাবে মিস করবো, আমরা আমাদের অভিভাবককে মিস করবো। সাংবাদিকতা জগতে তার যে অভাব সেটি পূরণ হবার নয়।
গত বছরের করোনা সংক্রামণ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসান শাহরিয়ারসহ ৩৯ জন সদস্য এবং গতকালও আরো একজন সদস্য সৈয়দ আকরামের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে তাদের আত্মার মাগফেরাতও কামনা করেন ক্লাব সভাপতি।
জানাজা শেষে জাতীয় প্রেসক্লাব, সম্পাদক পরিষদ, এডিটরস গিল্ড, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই অংশ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, নোয়াব, ওকাব, পিআইবি, ডিইউ-৬৭ ক্লাব, জাতীয় প্রেসক্লাব কর্মচারী ইউনিয়ন, সমকাল, নিউজ টুডে প্রভৃতি সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রয়াত সাংবাদিকের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
অর্ধ শতকের সাংবাদিকতা জীবনে রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারের উপ-সম্পাদক, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রধান সম্পাদক, ডেইলি টেলিগ্রাফের সম্পাদক, নিউজ টুডের সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি ফিন্যান্সিয়াল হেরাল্ড পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২১
এমএইচ/আরবি