রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ২০১৬ সালে শাখা ছাত্রলীগের প্রাথমিক কমিটি ঘোষণার ছয় মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এক বছর মেয়াদি এই কমিটির মেয়াদ শেষ হলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে চার বছর ধরে চলছে রাবি ছাত্রলীগ।
এদিকে দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের নেতাদের দলীয় বিভক্তি ও কোন্দল বেড়েই চলেছে। ফলে অনেক দিন ধরে সংগঠনের সঙ্গে থেকে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় তৈরি করতে না পেরে হতাশা নিয়ে রাজনীতি ছাড়ছেন সক্রিয় নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫ নম্বর ধারার ‘গ’ উপ-ধারায় বলা আছে, সরকারি চাকুরিতে নিয়োজিত কোনো ছাত্র ছাত্রলীগের কর্মকর্তা হতে পারবে না। চলতি কার্যকালের মধ্যে কারো ছাত্রজীবন ব্যত্যয় দেখা দিলে নির্বাহী সংসদ তার সদস্যপদ বাতিল বা মেয়াদ পর্যন্ত বহাল রাখতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাবি শাখা ছাত্রলীগের ২৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির দেড় শতাধিক নেতাকর্মী এখন ক্যাম্পাস রাজনীতির বাহিরে। যাদের মধ্যে সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, একজন সাংগঠনিকসহ বিভিন্ন সম্পাদক ও উপ-সম্পাদক মিলে ২৫ জনেরও অধিক নেতা বর্তমানে বিবাহিত। এছাড়া চাকরিতে প্রবেশ করেছেন প্রায় ৩০ জনের বেশি সিনিয়র নেতাকর্মী। এদের মধ্যে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য দেওয়া অবৈধ নিয়োগেও চাকরি পেয়েছেন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন দেড়শতাধিক নেতাকর্মী।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৫ তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদ রুনুকে সাধারণ সম্পাদক করে রাবি ছাত্রলীগের ১৩ সদস্যের প্রাথমিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিক কমিটির প্রায় ছয় মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ২০১৭ সালে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে।
নতুন কমিটিতে পদ প্রত্যাশী ও বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মো. হাবিবুল্লাহ নিক্সন বলেন, গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী রাবি ছাত্রলীগের ১ বছর মেয়াদি কমিটি ৫ বছর অতিক্রমের ফলে নেতা-কর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা, চাপা ক্ষোভ ও অস্থিরতা। গঠনতন্ত্রে বাধ্যবাধকতা থাকার পরেও নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় নতুন নেতৃত্বের বিকাশ হচ্ছে না। সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন সংকট ও বিশৃঙ্খলার। বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে মেধা-মননের রাজনীতির মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা দূর হয়ে রাজনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্যতা আসবে এবং সুস্থ, সুন্দর রাজনীতির চর্চা হবে।
রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেজবাহুল ইসলাম বলেন, একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ছাত্রলীগের সম্মেলন ও নতুন কমিটি হওয়ার কথা। নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে ও সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য নতুন কমিটি হওয়া বেশ প্রয়োজন। কারণ দীর্ঘদিন অনেকে রাজনীতি করে যারা কোনো পরিচয় পায়নি তারা চরমভাবে হতাশ। ফলে তারা একে একে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়া অতি জরুরি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, বর্তমানে কমিটির অনেকেই ক্যাম্পাসে রয়েছেন। কমিটি দেওয়ার সময় যারা তখন সিনিয়র ছিলেন এবং দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন তাদেরকে এই কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। কিন্তু তারা পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন পর চলে গেছেন।
বিবাহিত, সরকারি চাকরিজীবী ও অছাত্রদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, এটা সেন্ট্রালে জানানোর বিষয় না। যাদের পড়াশোনা শেষ তারা চলে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। হয়তো অনেকেই বিয়ে করেছেন। যেহেতু তারা অনেকদিন ক্যাম্পাসে রাজনীতি করেছেন তাই সেই জায়গা থেকে এখনো আমাদের সঙ্গে আছেন।
রাবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে আসলে সম্মেলন প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়ে গেছে। তবে জানুয়ারিতে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শেষ করে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাবো। তারপর ক্যাম্পাসের পরিবেশ বিবেচনা করে দ্রুতই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তবে সেটি জানুয়ারির মধ্যেই হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
এসআইএস