ফেনী: নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন প্রয়াত জয়নাল আবেদীন হাজারী। যেমন রয়েছে গডফাদার আখ্যা ঠিক তেমনি রয়েছে একজন দক্ষ্য সংগঠকের সুখ্যাতিও।
ষাট দশকের শেষের দিকে ফেনী কলেজের ছাত্র থাকাকালীন রাজনীতিতে নাম লেখান জয়নাল হাজারী। ছাত্রাবস্থায় ফেনী কলেজে তৎকালীন ছাত্র মজলিশের (বর্তমান ছাত্র সংসদ) জিএস ছিলেন। এরপর বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। পরে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদেও দায়িত্ব পালন করেন জয়নাল হাজারী।
এরপর ১৯৮০ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। সে সময় সভাপতি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম তালেব আলী। এরপর ১৯৮৮ ও ১৯৯৯ সালে আরও দুবার ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।
এছাড়া বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় চব্বিশ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন জয়নাল হাজারী। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ (ফেনী সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।
১৯৭৫ পরবর্তী দলের কঠিন দুঃসময়ে পঁচাত্তর পরবর্তী রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করা, বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন তাদের মধ্যে ফেনীর জয়নাল হাজারী অন্যতম। হয়তো তার পদ্ধতি এবং প্রকাশ সবক্ষেত্রেই গ্রহণযোগ্য ছিল না, কিন্তু তিনিই ফেনীর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
আলোচিত জয়নাল আবেদীন হাজারী ছিলেন একজন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাও। তিনি ১৯৭১ সালে ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের পরামর্শে রাজনগর এলাকায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর রাজনগরে গিয়ে ওই এলাকার বেকার যুবকদের নিয়ে তিনি একটি সিভিল ডিফেন্স টিমও গঠন করেছিলেন।
তার অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা ব্যয় হিসেবে ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ত্রাণ তহবিল থেকে হাজারীকে ৪০ লাখ টাকার অনুদান প্রদান করে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য থাকাকালীন তার মৃত্যু হয়। ইতিবাচক-নেতিবাচক নানা আলোচনা থাকলেও তার রাজনৈতিক জীবন ছিল বর্ণাঢ্য এবং সমৃদ্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
এসএইচডি/আরবি