ফেনী: ফেনীতে জেলা প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে শরীরের কাফনের কাপড় জড়িয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত শহরের তাকিয়া রোডে এ বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বিএনপি নেতারা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারির ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে এর নিন্দা জানান।
সভায় তারা বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে দেশে যখন সভা সমাবেশ বিক্ষোভ চলছে, ঠিক সেই মুহূর্তে সরকার ফের মারমুখি আচরণ শুরু করেছে।
তারা অভিযোগ করেন, ফেনীতে বিএনপি যেন সমাবেশ করতে না পারে সেজন্য সরকারি দলের একটি অঙ্গ-সংগঠনের মাধ্যমে একইস্থানে একই দিনের একই সময় পাল্টা সভা আহ্বান করা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক। অজুহাত হিসেবে শান্তি-শৃঙ্খল রক্ষার কথা বলে প্রশাসন শহরে ১৪৪ ধারা জারি ও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এতে মানুষের কন্ঠ সাময়িকভাবে রোধ করা গেলেও সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহারের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্ঠা ও ফেনী-২ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবদীন (ভিপি জয়নাল), ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম মজনু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহম্মদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মশিউর রহমান বিপ্লব। এছাড়া জেলা যুবদল ও জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে প্রতিবাদ মিছিল করে।
অপরদিকে ফেনীতে ১৪৪ ধারা জারি করে বিএনপির সভা করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে পুরাতন মুন্সিরহাট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সমাবেশের অনুমতির জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন জানানো হয়। এতে সমাবেশের স্থান হিসেবে মিজান ময়দান, ট্রাংক রোডে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর অথবা ট্রাংক রোডের প্রেসক্লাবের সামনে স্থান নির্ধানের দাবি করা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে মঙ্গলবার দুপুর থেকে শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের ওয়াপদা মাঠে সমাবেশের অনুমতি পায়। কিন্তু ফেনীর আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারীর মৃত্যু ও জানাজার জন্য মঙ্গলবারের সমাবেশ স্থগিত করে সেটা বুধবার করার জন্য বলা হয়। জেলা প্রশাসনের কাছে আবারও সভার অনুমতির আবেদন জানানো হয়। কিন্তু একই মাঠে একই সময়ে যুবলীগ সভা আহ্বান করে। তারাও প্রশাসনের কাছে ওই মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চায়।
তিনি অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার রাতেই জেলা প্রশাসন শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। রাত ১টার পর ওয়াপদা মাঠের বিএনপির সভার জন্য বানানো মঞ্চ পুলিশ খুলে নিয়ে যায়।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপিকে মঙ্গলবার সমাবেশ করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশেষ কারণে তারা সমাবেশ স্থগিত করে আবার বুধবার সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। পুলিশের পক্ষ থেকে ওই আবেদনের পক্ষে মতামত পাওয়া যায়নি। অপরদিকে একইদিনে একই সময়ে জেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে ওয়াপদা মাঠে সভা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। ফলে আইন-শৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করে শহরে বুধবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি ও সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
ওয়াপদা মাঠে বিএনপির সভার জন্য বানানো মঞ্চ পুলিশ সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, এটি সত্য নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
এসএইচডি/এএটি