ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সংলাপে যাবে না বিএনপি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
সংলাপে যাবে না বিএনপি

ঢাকা: বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা ব্যতীত নির্বাচন কমিশনের গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুধু সময়ের অপচয় বলে মনে করে বিএনপি।

সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় দলটির নেতারা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বলে জানান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় মহাসচিব এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, বিগত দুটি নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নিবন্ধনকৃত রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছিল। বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে পেশও করেছিল। কিন্তু সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচনকালীন আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে বে-আইনি ব্যবহার, নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতা, অযোগ্যতার কারণে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পর পর দুটো নির্বাচন কমিশনই চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১২ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান বলবৎ করে প্রকৃত পক্ষে আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র বিকাশের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। জনগণ তার ভোটের অধিকার হারিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকার বহাল রেখে নির্বাচন কমিশন কখনই স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে না। বিএনপি বিশ্বাস করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ব্যতিরেকে সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কোনো নির্বাচন কমিশনই অনুষ্ঠান করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছেন তার কোনো ক্ষমতা নেই পরিবর্তন করার। সেই কারণে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ কোনো ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারবে না। বিএনপি অর্থহীন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির সভায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, একুশে পদক প্রাপ্ত দেশ বরেণ্য সাংবাদিক দি ফিন্যাসিয়াল হেরাল্ড এর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। রিয়াজউদ্দিন দেশের গণ-মাধ্যমের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের মধ্যে অন্যতম। সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা, সংবাদকর্মীদের অধিকারের প্রশ্নে, গণতন্ত্রের প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন। বিশেষ করে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পনুরুদ্ধারের সংগ্রামে তার ভূমিকা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। সভায়, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ আকরাম হোসেনের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, দলীয় সভায় সম্প্রতি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ৪৫ জনের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজদের দ্রুত উদ্ধার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানানো হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নিশিরাতে ভোটাধিকার হরণের তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে মহানগর ও জেলা পর্যায়ের এবং ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।  
 
সভায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফএআই) কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত (২০১৪ সাল বাদ দিয়ে) ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ হিসাব সামগ্রিক চিত্র বর্ণনা করে বলে মনে করে না বিএনপি। প্রকৃত পক্ষে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সামগ্রিক চিত্র আরও ভয়াবহ। সভা মনে করে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয়ে অর্থ পাচার হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিএনপির সভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ ইউএনএইচআরসি এর গুমসংক্রান্ত ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস’ প্রকাশিত প্রতিবেদন বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা গুলো কর্তৃক ‘গুম’ এর ঘটনাগুলো উঠে এসেছে। গত এক দশক ধরে, রাজনৈতিক বিরোধী নেতা ও কর্মীদের গুম, নাগরিক আন্দোলনের কর্মী গুম হওয়া বাংলাদেশে একটা ত্রাসের অবস্থা সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বারবার বাংলাদেশে তাদের প্রতিনিধি দল তদন্তের জন্য পাঠাতে চাইলেও সরকার অনুমতি দেয়নি।

সভায় উক্ত সংস্থার তদন্ত কমিটিকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী,  সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
এমএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।