নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, ‘গোয়েন্দাদের রিপোর্ট যারা রাজনীতিতে ওপর থেকে পড়েছেন তারা বিশ্বাস করেন। আমি কাউকে ব্লেম করিনি শ্মশানের মাটির ব্যাপারে।
‘নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীর কারণে আমরা ঘরে থাকতে পারিনি। যে, বিএনপি-জামায়াত আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছিল। কারণ আমরা ওসমান পরিবারের সদস্য। আমাদের বাড়ি বায়তুল আমানের প্রতি কত ক্ষোভ ছিল। তারা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিতে চেয়েছিল। আমার বাবার মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের বাধন কমিউনিটি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। এ সংবাদ সম্মেলনকে তিনি তার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সংবাদ সম্মেলন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘১৬ তারিখ খেলা হবে এবং খেলা দেখা যাবে। গতবার তাকে শাড়ি দিয়েছিলাম এবার দেব দোয়া, যেন আল্লাহ তাকে হেদায়েত করেন। গত ৭/৮ বছর ধরে একটি মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। আমার জীবনে আমি এত কাঁদিনি তবে, কবরস্থানের ঘটনায় আমি অনেক দুঃখ পেয়েছি। আমি আশা করেছিলাম অন্তত একটি তদন্ত কমিটি হবে, তা না হয়ে বরং আমার বিরুদ্ধে প্রেস রিলিজ দিচ্ছে। এটাও তাদের কথায় যারা লিফলেটে নৌকা না লিখে প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছে’।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি আইনপ্রনেতা, আমি আইন ভঙ্গ করলে এটা শোভনীয় নয়। আজকে এই দিনে বঙ্গবন্ধু তার মা ও মাটির কাছে ফিরে এসেছিলেন। প্রথমেই বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সব শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান’। আমি অবাক হই, আমি কেন সব সময় সাবজেক্ট হই। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) খুব ছোট একটা করপোরেশন। এখানে তৃণমূলের রাস্তা থেকে উঠে আসা নেতারা আছেন। তারা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাবিহীন বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করেছেন। আমার ফতুল্লায় কয়েকদিন আগে নির্বাচন হয়েছে। আমি যাইনি কথাও বলিনি’।
শামীম ওসমান বলেন, ‘গরিবের বৌ সবার ভাবি হয়। একজন আমাকে নিয়ে নিচ্ছে আরেকজন আমাকে দিয়ে দিচ্ছে। আমি সত্য বলতে চাই। এই কয়েকদিন চুপ ছিলাম কারণ, এটা আমার কাজ না। তবে, আমার চুপ থাকাকে কেন্দ্র করে অনেকে দলের ক্ষতি করার চেষ্টা হচ্ছে। কেউ বাইরে থেকে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে আবার কেউ দলের ভেতর থেকে। আমি মানসিকভাবে শকড একটা কারণে। আমি সেই পরিবারের সন্তান যে, পরিবারকে মোশতাক ফোন করেছিল, তখন আমার মা ভাষা সৈনিক তিনি আমার বাবাকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাবের উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমার স্বামী আপনার মন্ত্রী সভায় যোগ দিলে হয় তাকে হত্যা করবো না পারলে আত্মহত্যা করবো’। মনসুর আলী চাচা যে, রুমে ছিলেন আমার আব্বাও সে রুমে ছিলেন। সেদিন বাবা শুনেছিলেন তারা বলছিল আমাদের হত্যা করো আমরা শেখ মুজিবের লোক ছিলাম আছি থাকবো। এই হাত দিয়ে ৫০টা লাশ দাফন করেছি। রক্তের ওপর শুয়ে ছিলাম বোমা হামলার পর কানে কিছু শুনছিলাম না। শুধু ভেবেছিলাম দেশটা বাঁচানের জন্য কাকে দরকার। আমরা কৈশোর, যৌবনের আনন্দ পাইনি। সেদিন বলেছিলাম শেখ হাসিনাকে বাঁচান। আমাদের সম্পর্কে অনেক অপপ্রচার হয়েছে। এমন কোন কাজ নেই যা করিনি বিদেশে। আমরা না খেয়ে জীবন কাটিয়েছি। পঁচাত্তর থেকে একবেলা ভাত খেয়েছি দুই বেলা খাইনি। আমার বড় বোনকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল মসজিদে একটা করে জিলাপি দিয়ে। এই ত্যাগ আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ পরিবারের। কিছুসংখ্যক তেলবাজদের কারণে সেই সব লোকেদের মনে রক্তক্ষরণ হয়’।
তৈমূর আলম খন্দকারকে বলবো, আপনি আপনার মত কাজ করেন। হাতি দিয়ে নৌকা ডুবায় দেবেন তা হবে না। হাতি নৌকায় উঠতে দেব না। নৌকায় ওঠার আগেই হাতি কাঁধে উঠিয়ে দৌড় দেবো। নারায়ণগঞ্জে জামায়াত-বিএনপির অত বড় শক্তি নাই, নৌকা ডুবানোর।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি চন্দন শীল, সেক্রেটারি খোকন সাহা, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, নারায়ণগঞ্জ জেলা দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর ওয়াজেদ আলী খোকন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি হাসান ফেরদাউস জুয়েল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহসিন মিয়া, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল, সেক্রেটারি শওকত আলী, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি মানু, এনায়েতনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান, বিলুপ্ত মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমএ গাজী সালাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২২
এএটি